প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে তাদের সাশ্রয়ী হতে বলা হচ্ছে। খাদ্যের জন্য রেশন চালু করছে অনেক উন্নত দেশ।
বিজ্ঞাপনসুতরাং আমাদেরকেও আরো মিতব্যয়ী হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সামনে আরো কঠিন সময় আসবে। আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, গবেষণা ছাড়া আসলে উৎকর্ষ সাধন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের গবেষণা এখনো আমাদের অপ্রতুল। গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না। ’
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা, গবেষণা কার্যক্রমের গুণগত মানোন্নয়নের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আপনারা এখন যেটুকু করছেন সে জন্য ধন্যবাদ জানাই, তবে গবেষণার ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের গবেষণা এখনো আমাদের অপ্রতুল। তিনি বলেন, আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের শুধু চিকিৎসা দিলেই চলবে না। সঙ্গে সঙ্গে তাদের কিন্তু গবেষণা করাও জরুরি। কাজেই এ বিষয়ে আমি আপনাদের অনুরোধ করব, যাতে আপনারা বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে নজর দেন।
সরকার প্রধান এ সময় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রফেসর এমিরেটাস নিয়োগ দেওয়ায় বিএসএমএমইউর কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনাদের প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করবেন, আপনাদের কাছে সেই আহ্বানই জানাই। ’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদল এবং বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউন। বিএসএমএমইইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং বিএসএমএমইউর সার্বিক কর্মকাণ্ড বিষয়ে পৃথক দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রায় ৪ একর জমির ওপর মোট ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল এক হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে। সরকার বরাদ্দ করেছে ৩৩০ কোটি টাকা এবং বিএসএমএমইউ ১৭০ কোটি টাকা দিয়েছে।
অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ, হাসপাতালটি যেকোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসক দ্বারা রেফার করা সমস্ত গুরুতর রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করবে। প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার রোগী হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা পাবেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাসপাতালে ৭৫০ শয্যা থাকবে। এ ছাড়া ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, একটি ১০০ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, একটি ১০০ শয্যার জরুরি ইউনিট, ছয়টি ভিভিআইপি এবং ২২টি ভিআইপি কেবিন এবং ২৫টি ডিলাক্স কেবিন থাকবে। বিশেষায়িত পরিষেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন, জিন থেরাপি এবং রোবটিক সার্জারি৷
১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন পিজি হাসপাতালের রক্ত সংরক্ষণাগার এবং নতুন মহিলা ওয়ার্ডের উদ্বোধনকালে জাতির পিতার বক্তব্যেও একটি অংশের উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ধর্ম-বর্ণ ও দল-মত-নির্বিশেষে সব রোগীর প্রতি সমান দরদে চিকিৎসায় এগিয়ে আসার জন্য চিকিৎসকসমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আপনারা ডাক্তার, আপনাদের মন হতে হবে অনেক উদার, আপনাদের মন হতে হবে সেবার। আপনাদের কাছে কোনো বড় ছোট থাকবে না, আপনাদের কাছে থাকবে রোগ, কারো রোগ বেশি কারো কম। তাহলেই সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। আপনারা মানুষের সহযোগিতা পাবেন। ’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ডাক্তারদের শহরকেন্দ্রিক না থেকে উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্যসেবাকে তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানান। পাশাপাশি অনলাইনে চিকিৎসাসেবাও জোরদার করার পরামর্শ দেন। তিনি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, সেবার মানটা যাতে বাড়ে সে জন্যও ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, ৭৫০ শয্যার এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, ক্যান্সার, ইনফার্টিলিটি, কার্ডিয়াক সার্জারি, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগের আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হবে।
দরিদ্র রোগীদের জন্য থাকবে চিকিৎসায় ভর্তুকির ব্যবস্থা। রোগীদের সেবায় ৩০০ চিকিৎসকসহ এক হাজার ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন। পর্যায়ক্রমে তাঁদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিতে দেশে দুই বছর থাকবেন ছয়জন কোরিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ও ৫০ জন কোরিয়ান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, হাসপাতালটির মাধ্যমে দেশে চিকিৎসাসেবায় নয়া দিগন্ত উন্মোচন হবে। এরই মধ্যে তিন দফায় চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তাকে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ পাবেন আরো ১৪০ জন। উন্নত চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি উন্নত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের দিগন্ত প্রসারিত করা হবে। কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টের সুবিধা থাকবে। এ জন্য ৮০ জন চিকিৎসক ৩০ জন নার্স ও ১০ জন কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরো ৬১০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তিনি জানান, হাসপাতালটিতে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন, রোবটিক অপারেশন, জিন থেরাপির ব্যবস্থা থাকছে। উন্নত মানের আধুনিক ব্যবস্থাপনার বহির্বিভাগ, ইনফো ডেস্ক ও ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার থাকবে। ভবনের এক ভাগে থাকবে স্পেশালাইজড অটিজম সেন্টারসহ মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথকেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাসকুলার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার। আরেক ভাগে থাকবে রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার।