গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৯৩ জন নিহত ও নিখোঁজ হয়েছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, পাঁচতলা একটি আবাসিক ভবনে এই হামলা চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে কম্বলে ঢাকা মৃতদেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে চলতি মাসের শুরুতে তারা গাজার এই অঞ্চলে নতুন এক আক্রমণ শুরু করেছে। তাদের দাবি, হামাস সেখানে আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
নিকটবর্তী জাবালিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।তবে চিকিৎসক ও ওষুধের সংকটে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া ও বেইত হানুন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। ইসরায়েলি দাবি, তারা হামাস যোদ্ধাদের ফের সংগঠিত হওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তাদের অভিযোগ, হামাস সাধারণ মানুষের মাঝে লুকিয়ে অবস্থান করছে।তবে হামাস এসব অস্বীকার করেছে।
এদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েল মঙ্গলবার জানায়, বিগত ২৪ ঘণ্টায় তারা জাবালিয়ায় ৪০ জন ‘সন্ত্রাসী’ ও গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অনেক ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করেছে, যাদের কেউ কেউ সেনাদের কাছে বিস্ফোরক স্থাপন করতে চেয়েছিল।
গাজার উত্তরাঞ্চল এখন গভীর মানবিক সংকটের মুখোমুখি। সেখানে লাখ লাখ মানুষ চরম দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এর মাঝেই ইসরায়েলি পার্লামেন্ট সোমবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডাব্লিউএ) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে।
এর ফলে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক শুক্রবার বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পুরো জনগোষ্ঠীকে বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে ফেলছে। বেসামরিক নাগরিকদের মাঝে, এমনকি উদ্বাস্তুদের আশ্রয়কেন্দ্রেও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে, যা তাদের বিপদের মধ্যে ফেলছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণে প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার পর ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে এই যুদ্ধ শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত সেখানে ৪২ হাজার ৯২৪ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তবে এই পরিসংখ্যানে বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। অন্যদিকে ইসরায়েল এখনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের গাজায় স্বাধীনভাবে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। ফলে সেখানকার তথ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।