Monday , December 23 2024
Breaking News

ডেঙ্গু পরিস্থিতি লাগামহীন

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি লাগামহীন হয়ে পড়েছে। দেশের ইতিহাসে এত বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি আর কখনোই। ডেঙ্গুর প্রকোপের বিস্তারের মধ্যে দেশে গত একদিনে মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ২১৬৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও আটজনের। গতকাল মঙ্গলবার নতুন রোগীদের নিয়ে এ বছর হাসপাতালে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৩৫৯ জন। এরইমধ্যে ঢাকাকে ছাড়িয়েছে ঢাকার বাইরে হাসপাতালের রোগী ভর্তি হওয়ার পরিমাণ। এ বছর এখন পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে ৫০ হাজার ১৭০ জনকে; ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ৫৪ হাজার ১৮৯ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক বছরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এ সংখ্যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে দেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ বার বছরের চার মাস বাকি থাকতেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৪৯৩ জনের মৃত্যু হল। এক বছরে মৃত্যুর এ সংখ্যাও যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্য বলছে, গতকাল মঙ্গলবার দেশজুড়ে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ৮৭২ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ১৩২৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। মৃত আটজনের মধ্যে ঢাকায় তিনজন এবং ঢাকার বাইরে পাঁচজন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ হাজার ৮২৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৫৭০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪ হাজার ২৫৯ জন। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুন মাসে যেখানে পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে। আগস্টের ২২ দিনেই ৫২ হাজার ৫২৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রæয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন ও জুন ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপের বিস্তারের মধ্যে শুধু রোগী ভর্তি নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও এ বছর বেড়েছে। জুন থেকে এ রোগে মারা যাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে; ওই মাসে মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। জুলাইয়ে তা অনেক বেড়ে ২০৪ জনে গিয়ে ঠেকে। আগস্টের ২১ দিনে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে; এ মাসে মৃত্যু হয়েছে ২৪২ জনের।

এর আগে জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ২ জন, মে মাসে ২ জন এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরেও প্রকোপ বেড়েছে ব্যাপক হারে। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় রেকর্ড এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।

ডেঙ্গু মশা কামড়ালে: ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশা কামড়ালে, ওই স্থানটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছুটা ফুলে যায় এবং চুলকায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে মশা কামড়ানো সত্তে¡ও ফুলে যাওয়া বা চুলকানি কোনোটি নাও হতে পারে। তবে মশা রক্ত খাওয়ার জন্য যখন হুল ফোটায় তখন বেশিরভাগ মানুষ তা টের পান না। এর কারণ মশা হুল ফোটানোর আগে কিছুটা ব্যথানাশক ঘন তরল মানুষের ত্বকের ভেতর ছড়িয়ে দেয়। এতে কিছুক্ষণের জন্য ত্বকের ওই অংশটি অবশ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অবশ ভাব চলে গেলে ত্বকের ওই জায়গা একটু চুলকায় এবং ফুলে যায়। কীটতত্ত¡বিদ ড. কবিরুল বাশার জানিয়েছেন, এডিস মশা কামড়ালে ক্ষতস্থানটি একটি মোটর দানার সমান বা তার চেয়ে কিছুটা অল্প জায়গা জুড়ে ফুলে যেতে পারে। তাই মশার কামড় থেকে বাঁচতে হাত ও পা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া দিনে-রাতে মশারি ব্যবহার, দরজা জানালায় মশারোধী নেট ব্যবহার, সেইসাথে মশা নিরোধক ক্রিম, স্প্রে, প্যাচ ব্যান্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। মশা তাড়াতে অ্যারোসল, কয়েল, ধুপ, ম্যাট, ব্যাটও ব্যবহার হয়ে থাকে। একসময় বলা হতো ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র দিনের বেলা কামড়ায়। কিন্তু এডিস মশা সম্প্রতি তাদের চরিত্র বদলেছে। এখন দিনে রাতে সব বেলাতেই কামড়াতে পারে এডিস এজিপ্টি, বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে।

কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেছেন, ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা খালি চোখে দেখেও শনাক্ত করা সম্ভব।

তিনি জানান, মশাটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে এবং এর গায়ে-পায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। তবে আর্মিগিয়ার নামে একটি মশার পেটেও একই ধরণের ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। তবে, এ মশাটি আকারে একটু বড় হয়। অনেকে এই মশাটিকে এডিস অ্যাজিপ্টি বলে ভুল করে। আপনাকে যে মশা কামড়েছে সেটি এডিস কিনা নিশ্চিত হতে মশাটির পায়ের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। শুধুমাত্র এডিস মশার পায়েই ডোরাকাটা দাগ থাকে। এ ছাড়া পুরুষ মশার অ্যান্টেনা বা শুঙ্গটি কিছুটা রোমশ হয়ে থাকে। স্ত্রী মশার এমনটা থাকে না।

মশা কামড়ালেই কি ডেঙ্গু হবে: এডিস মশা কামড়ালেই যে মানুষের ডেঙ্গু জ্বর হবে, বিষয়টি তেমন নয় বলে জানিয়েছেন ড. কবিরুল বাশার। তবে যে এডিস মশাটি ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করছে, সেটি কামড়ালে ডেঙ্গু হতে পারে। আবার কোনো সুস্থ এডিস মশা যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে রক্ত পান করে তাহলে মশাটির মধ্যে ডেঙ্গুর ভাইরাস সংক্রমিত হবে। এরপর ওই ভাইরাসবাহী মশা সংক্রমিত থাকা অবস্থায় যদি আবার সুস্থ কোনো মানুষের শরীরে কামড়ায় তাহলে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। যেকোনো মশার মতই এডিসও সাধারণত একাধিক ব্যক্তিকে কামড়ায়। তাই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির শরীর থেকে এডিস মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর ঐ মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মশা কামড়ালে সেটি রক্তের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তেমন কিছু করার থাকে না বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার।

তবে মশা কামড়ানোর পর ভাইরাসটি যদি শুধুমাত্র চামড়ার ওপরে লেগে থাকে তাহলে ওই স্থানটি ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ধুলে ভাইরাস মরে যাবে। তবে একবার রক্তের সাথে ভাইরাস মিশে গেলে কোনো কিছুই কাজ করবে না।

SHARE

About bnews24

Check Also

আরো ৫ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে

এডিস মশাজনিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *