দেশে বর্তমানে ভোজ্য তেলের কোনো সংকট নেই, পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আগের দামে কেনা তেল মজুদ রয়েছে কিংবা র্নিধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা আমাদের লক্ষ্য নয়।
বুধবার (১৮ মে) সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বার্ষিক চাহিদার ৯০ ভাগ ভোজ্য তেল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজার অর্থ্যাৎ পাম তেল ও সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় জোগানের রাইস ব্র্যান ও সরিষার তেল উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, দেশে এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন হয়। এটা খুব সহজেই ৭ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে রাইস ব্র্যানের সুফল সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। চিকিৎসকদের এ নিয়ে কথা বলতে হবে। পাশাপাশি সরিষার উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনার কথাও কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বৈঠকে ভোজ্য তেল ছাড়াও পেঁয়াজ, গম ও লবণের মূল্য এবং সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর বাইরে বড় পরিমাণের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এখন আমাদের ভাবনার বিষয় হচ্ছে আমরা কত দামে পেঁয়াজ খাব। কৃষকদেরও কিছু প্রণোদনা দিতে হবে তাহলে তারা উৎপাদন বাড়াবে। গতবছর কৃষক পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়ে এবার আড়াই লাখ টন উৎপাদন বাড়িয়েছে। পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। এখন আমদানি অনুমোদন বন্ধ করা আছে। প্রয়োজন হলে সেটা চালু করে দেওয়া হবে।
টিপু মুনশি আরো জানান, আগামী জুন মাসে বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে। ১ কোটি পরিবার পাওয়ার অর্থ হলো ৫ কোটি মানুষ এর সুবিধা ভোগ করবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কিছু ভোগ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে যে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তা মোকাবেলায় সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড টেরিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী আহাদ খান, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং এফবিসিসিআই সহসভাপতি মো. আমীন হেলালী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী সচিবালয়ে তাঁর অফিস কক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের নন-রেসিডেন্ট হাইকমিশনার ডিরেক লোহের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখানে পণ্য উৎপাদন করে সহজে রপ্তানি করা যাবে।
সভায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে উভয় দেশের মধ্যে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময়ের ব্যাপারে একমত পোষণ করা হয়।