দেশে বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসীরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১০৭ কোটি মার্কিন ডলার। এই হিসাবে প্রতিদিন দেশে গড়ে এসেছে ৭ কোটি ১৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
রোববার ( ১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ব্যাংকগুলোতে ১০৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯২ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, ডিসেম্বরের প্রথম ৮ দিনে ৫৩ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এ ছাড়া ৯ থেকে ১৫ ডিসেম্বর দেশে এসেছে ৫৩ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত মার্চের পর থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতে সংকট আরও প্রকট হয়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন-অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এর উপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় তারা সভা করে ডলারের রেট নির্ধারণ করে আসছে।
গত ১৩ ডিসেম্বর দেশের মুদ্রা বাজারে ডলারের স্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ায় মুদ্রাটির দাম তৃতীয় দফায় কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনগুলো। ভবিষ্যতে ডলারের দাম আরও কমবে।
সবশেষ ব্যাংকগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের ঘোষিত দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর বিক্রি দর ১১০ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজকে আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হচ্ছে ১১০ টাকা ২৫ পয়সা।
কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুণতে হচ্ছে ১২২ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১২২ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে গত নভেম্বর মাসে ১৯৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এরমধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিল ১৪ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭২ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।
নভেম্বরে দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, কুয়েত, মালয়েশিয়া, কাতার, ওমান ও বাহরাইন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে।
আর যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইন থেকে নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে ২১ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার, ১৯ কোটি ৪০ লাখ, ১৪ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার, ১৪ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার, ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার, ৮ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার, ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার ও ৪ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবর মাসে এসেছে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।