শুধু প্রতিপক্ষ নয়, ডেমোক্রেটিক দলের নেতারাও অস্বস্তিতে ফেলছেন জো বাইডেনকে। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে এখনই সরে দাঁড়ানো উচিত বাইডেনের। সিনেটর পিটার ওয়েলচ, হলিউড তারকা, ডেমোক্রেটিক দলের অন্যতম তহবিল সংগ্রহকারী জর্জ কলুনি, এমনকি সাবেক হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও তুলেছেন এমন দাবি।
ন্যান্সি পেলোসি ইঙ্গিতে সরে দাঁড়ানোর কথা বললেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকারটুকু বাইডেনকেই দিতে চান।
এমএসএনবিসি চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, ‘পুরো বিষয়টি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। আমরা সবাই আসলে তাকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সাহস জোগাচ্ছি। কারণ সময় তো দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।’
সময় স্বল্পতা বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠছে ডেমোক্র্যাট শিবিরে।
বাইডেনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা, আর নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ফল নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে ক্রমে। বিশেষ করে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সর্বশেষ বিতর্কে বাইডেনের ভাঙা কণ্ঠে নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলা, কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলা অনেক ডেমোক্র্যাট নেতাকেই উদ্বিগ্ন করেছে। সে উদ্বেগ এতটাই যে তারা মনে করছেন নিজের, দলের ও দেশের স্বার্থে বাইডেনের উচিত এখনই নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানো।
ওয়াশিংটন পোস্টে বুধবার পিটার ওয়েলচ লিখেছেন, ‘বিতর্কে বাইডেনের ভয়াবহ পারফরম্যান্স থেকে আমরা নজর সরিয়ে রাখতে পারি না।
দেশের ভালোর জন্য আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি নির্বাচনী দৌড় থেকে (নিজেকে) প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ ডেমোক্রেটিক দলের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের আইন প্রণেতা প্যাট রায়ান ও আর্ল বলুমেনআওয়ারও বাইডেনের প্রতি নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
হলিউড অভিনেতা জর্জ কলুনিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে সন্দিহান। নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা নিজস্ব মতামতে সেই সন্দেহ প্রকাশ করার পাশাপাশি বাইডেনকে অবিলম্বে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।
বাইডেন অবশ্য ন্যান্সি পেলোসি, পিটার ওয়েলচ, প্যাট রায়ান, আর্ল বলুমেনআওয়ার, জর্জ কলুনিদের কথায় কান দিতে নারাজ।ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে পারফরম্যান্স যে ভালো ছিল না, তা মানছেন তিনি। তবে ৮১ বছর বয়সী মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন, ওই বিতর্ক ছিল স্রেফ একটা ‘খারাপ পর্ব’।
বাইডেনের তিন সহকারীকে তলব
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ওভারসাইট কমিটিও জানতে চায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা জো বাইডেনের আছে কি না। রিপাবলিকান দলের প্রাধান্যের এ কমিটি এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য হোয়াইট হাউসের তিন কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। সেই তালিকায় আছেন বাইডেনের স্ত্রীর অন্যতম সহকারী অ্যান্থনি বার্নাল, ডেপুটি চিফ অব স্টাফ অ্যানি টোমাসিনি ও সিনিয়র অ্যাডভাইজার অ্যাশলে উইলিয়ামস।
তাদের ডেকে পাঠানোর কারণ জানাতে দিয়ে রিপাবলিকান দলের আইন প্রণেতা জেমস কমার বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থেই কমিটির সামনে আসতে হবে। তা (স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি) আমেরিকানদের প্রাপ্য।’
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ওভারসাইট কমিটির দাবি, ‘বাইডেনের এক সাবেক সহকারীর মতে, অ্যানি টোমাসিনি, অ্যান্থনি বার্নাল ও অ্যাশলে উইলিয়াম—এই তিন কর্মী বাইডেনের চারপাশে এক রক্ষা বলয় তৈরি করে রেখেছেন।’ তাই তারা মনে করছেন, এই তিনজনের কাছ থেকে জো বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।’
তবে হোয়াই হাউসের মুখপাত্র ইয়ান স্যামস বলেছেন, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ওভারসাইট কমিটির এই উদ্যোগ নিছক ‘ভিত্তিহীন রাজনৈতিক স্টান্টবাজি।’