শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নতুন সমাজ গড়তে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন খুব জরুরি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে নারীর অগ্রগতিতে প্রাপ্তি অনেক। অধিকার প্রশ্নের নারীরা অনেক দূর এগিয়ে গেলেও সামাজিক কিছু রক্ষণশীলতা আছে। সর্বোচ্চ পদে থাকলেও নারী নিরাপদ নয়।
শনিবার (১৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর বিজয় নগরের ফার্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসে আয়োজিত মহিলা পরিষদের জাতীয় পরিষদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় নারীর ইজ্জত সম্ভ্রম হানির মতো সামাজিক ধারণা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে। এর আচরণগত দায় পুরুষের। ভাষা দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা দূর করতে হবে। নারী পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে, নারীর অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হলে পুরুষকে এ আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে। রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতির জন্য তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য আরও কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এগিয়েছি অনেক দূর, কিন্তু যেতে হবে আরও বহুদূর। নারীর অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীবান্ধব রাজনীতি ও নারী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. শাহলা খাতুন বলেন, ‘দেশের নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ে নারীরা আসলেও এখনো অনেক নারী বঞ্চনার শিকার। জেন্ডার বৈষম্য আছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আরও উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। তৃণমূল থেকে কাজ করতে হবে। নারীদের প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে যথাযথ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘নারীর প্রতি বৈষম্য-রোধে মহিলা পরিষদ সাংগঠনিকভাবে জোরালো ভূমিকা পালন করছে, প্রতিবাদ জানিয়েছে। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের মাধ্যমে জোরালো ভূমিকা নারীর ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য কাজ করতে হবে।’
সুইডেন অ্যাম্বাসির অ্যাম্বাসেডর মিস আলেকক্সান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ড বলেন, ‘আজকের সভায় জাতীয় পরিষদের আগত অধিক সংখ্যক সদস্যদের উপস্থিতি দেখে আমি অভিভূত। খুলনা, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রামের নারীদের যেকোনো পরিস্থিতিতে লড়াই করার ক্ষমতা দেখে আমি বিস্মিত। এদেশের সামাজিক প্রথা, বৈষম্যপূর্ণ সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সক্ষমতা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রয়েছে।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, ‘নারী আন্দোলন মনে করে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করে একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবাধিকার পূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এবং নারীর ক্ষমতায়নকে টেকসই করতে হলে নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধিক সংখ্যক নারী নেতৃত্ব তৈরি, সিডও সনদ বাস্তবায়নসহ সকল আন্তর্জাতিক সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, নীতিনির্ধারণ থেকে তৃণমূলসহ সকল ক্ষেত্রে সৃজনশীল উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারী অধিকারের ও বৈষম্য দূরের লড়াই নারীকে সঙ্গে নিয়েই করতে হয়ে। ধর্মান্ধগোষ্ঠীর দাপট আছে শিক্ষা, প্রযুক্তিতে, সামাজিক মাধ্যমে। শিক্ষা আন্দোলন আমাদের গড়ে তোলা জরুরি। নারী আন্দোলনের ক্রমান্বিত ধারা আছে।’
তিনি বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার সময় থেকে আজকের নারীর অবস্থানে অনেক পরিবর্তন এসেছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য থেকে। সমাজ রক্ষণশীলতাকে ভেঙে নারী উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। নারী পুরুষের বৈষম্য দূরের লড়াইকে ক্রমাগত চালিয়ে নিতে হবে।’