পার্বত্য চট্টগ্রামে জারিকৃত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ‘১১ দফা’ নির্দেশনা বাতিল করাসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
রোববার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) আয়োজিত ‘হাইকোর্টের জামিন পদদলিত করে জেলগেইটে দুই বার পুনঃআটক, পাহাড়ে সেনা-গোয়েন্দা সংস্থার খবরদারি ও দীর্ঘ ৫ বছর ৮ মাসের কারাজীবনের বিবরণ তুলে ধরতে ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমার’ সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমা লিখিত বক্তব্যে বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ-অব্দি শাসকগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক দমন-পীড়ন, অমানুষিক নির্যাতন, হত্যার মতো ঘটনার শিকার হয়ে অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। দীর্ঘ সংগ্রামের পথে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় বহু নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী হতে হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসন আমলে ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আমি রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব থাকাকালীন রাঙামাটির কুতুকছড়ি এলাকা থেকে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক গ্রেফতার হই।
গ্রেফতারের পর আমাকে রাঙামাটি সেনা ব্রিগেডে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দুপুর ২ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আমার ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে সময় সেনাবাহিনী সদস্যরা আমাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। সেনাবাহিনী অমানুষিক নির্যাতনের পর আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন পিসিপি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ’র বিরুদ্ধে জোরপূর্বকভাবে সেনাবাহিনীর নির্দেশিত স্বীকারোক্তিমূলক মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দিতে বাধ্য করে। আমি উক্ত জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য ঘৃণ্যভাবে প্রত্যাখ্যান করছি এবং সেনা সদস্যদের এহেন কার্যকলাপকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এসময় কুনেন্টু চাকমা সংগঠনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো:
১। অবিলম্বে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি কারাগারে আটক ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মুক্তি দিতে হবে; আদালত থেকে জামিন লাভের পর জেল গেইট থেকে পুনরায় গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে; এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নামে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা ও হুলিয়া প্রত্যাহার করতে হবে।
২। সেনাবাহিনীর সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ সন্ত্রাসী কর্তৃক গত ৩০ অক্টোবর ২০২৪ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ৩ জন ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রামে জারিকৃত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ‘১১ দফা’ নির্দেশনা বাতিল করতে হবে।
৪। গত ১৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ৪ জন পাহাড়িকে হত্যার সাথে জড়িত সেনা-সেটলাদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। এছাড়াও নিহত এবং অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের যথাযথা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৫। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ বাহিনী ভেঙে দিতে হবে এবং তাদের মধ্যে যারা খুন, গুম, অপহরণ ও সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তাদেরকে গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি দিতে হবে।
৬। খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানা গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৭। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ‘অপারেশন উত্তরণ’ বাতিলপূর্বক সেনাশাসন প্রত্যাহার করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।