Monday , December 23 2024
Breaking News

প্রতিটি ঘরে কোরআন

আল কোরআন বিশ্বের বিস্ময়কর গ্রন্থ। এটি সর্বাধিক প্রশংসিত মহাপ্রজ্ঞাময় রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ নবী বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতারিত হয়েছে। আসমানি গ্রন্থগুলোর মধ্যে অমর, অবিনশ্বর ও চিরন্তন অলৌকিকতায় পূর্ণ একমাত্র আল কোরআনই সর্বকালে মানুষকে কল্যাণের অফুরন্ত ধারায় সিক্ত করেছে; সত্যান্বেষীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। চিন্তাশীলদের মধ্যে ব্যাপক চিন্তার উদ্রেক ঘটিয়েছে।

বিজ্ঞাপনবিশ্বজনীন এ গ্রন্থের আবেদন ও উপযোগিতা সব যুগে এবং সব স্থানেই কার্যকর। কোরআনের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়েই মুসলমানরা পৃথিবীকে একটি উন্নত সভ্যতা উপহার দিয়েছে।

মুসলিম দেশগুলোতে লোকেরা কোরআনকে ভালোবেসে সবার ঘরে এক বা একাধিক কোরআনের কপি সংরক্ষণ করেন। অনেকে তা দেখে প্রতিদিন বা মাঝেমধ্যে পড়েন। অনেকে বরকত ও রহমতের প্রত্যাশায় ঘরে কোরআনের কপি রেখে দেন। এটা মুসলমানদের অন্যতম সংস্কৃতি।

এ ক্ষেত্রে প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি বিষয়ে আলোচনা এসে যায়, সেটি হলো, ঘরে থাকা কোরআনের পুরনো কপি, যা পড়া যায় না বা ছেঁড়া-ফাটার দরুন উপকৃত হওয়ার অন্তরায়, এমন কোরআনের কপি কী করবে। এ বিষয়ে কয়েকটি করণীয় আছে।

প্রথমত, সম্ভব হলে পুরনো, ছেঁড়া-ফাটা কপি মেরামত/বাইন্ডিং করে ব্যবহারের উপযোগী করার চেষ্টা করবে। এতে একটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম আল্লাহর কিতাবের প্রতি যত্ন নেওয়ার কারণে সওয়াব পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয়ত, মেরামত/বাইন্ডিং করে ব্যবহারের উপযোগী করা সম্ভব না হলে কোরআনুল কারিমের পুরনো বা ছেঁড়া পাণ্ডুলিপিগুলো মৃত মুসলমান ব্যক্তিকে দাফনের মতো করে পবিত্র কাপড়ে পেঁচিয়ে সুরক্ষিত ও পবিত্র স্থানে দাফন করে দেবে।

তৃতীয়ত, এমন পুরনো কোরআনের কপি সাগরে ভাসিয়ে দেবে।

চতুর্থত, আধুনিক যুগে কাগজ গুঁড়া করার মেশিন (চধঢ়বৎ ংযত্বফফবৎ) পাওয়া যায়। এসব মেশিন ব্যবহার করেও কোরআনের অকেজো পাতাগুলোকে খুব সূক্ষ্মভাবে গুঁড়া করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, গুঁড়া করার পর কোরআনের কোনো অক্ষর অক্ষত না থাকে।

পঞ্চমত, ইসলামওয়েবের মতে, কোরআনের কপি একেবারে পড়ার অনুপযোগী হলে তা পুড়িয়ে ফেলার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ আলেম বৈধ হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। (ইসলামওয়েব ডটনেট, ফতোয়া নম্বর : ৪২৪৪০)। কিন্তু হানাফি মাজহাবে অধিক সতর্কতাবশত পুঁতে ফেলা বা সাগরে ফেলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পুড়িয়ে ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। (রদ্দুল মুহতার : ৫/২৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩২৩) তবে কোরআনের মর্যাদা রক্ষায় সবাই একমত যে কোনোভাবেই যেন কোরআনুল কারিমের অবমাননা না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।

তাই এটা ডাস্টবিনে অথবা রাস্তায় ফেলা যাবে না অথবা এমন জায়গায় নিক্ষেপ করা যাবে না, যেখানে কোরআনে কারিমের অবমাননা হতে পারে। কোরআন শরিফ যদি নষ্টও হয়ে যায় বা যেই পর্যায়েই থাক না কেন, কোরআন যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। যেন কোরআনের সম্মানহানি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই সম্ভবত সাহাবায়ে কেরাম অব্যবহারযোগ্য কোরআনের কপিগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মূল কুরাইশি আরবিতে কোরআন নাজিল হয়েছিল। পরে অন্য উপভাষাতেও কোরআন পাঠের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাতে শব্দ ও মর্মগত বিপত্তি দেখা দিলে তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.) কোরআনের মূল কুরাইশি কপি রেখে বাকি সব কপি পুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। বর্তমানে শুধু সেই কোরআন সর্বত্র পঠিত হয়। সহিহ বুখারিতে এসেছে : ‘যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লেখা হয়ে গেল, তখন উসমান (রা.) মূল লিপিগুলো হাফসা (রা.)-এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কোরআনের লিখিত মাসহাবসমূহের এক একখানা মাসহাব এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দেন এবং এ ছাড়া আলাদা আলাদা বা একত্রিত কোরআনের যে কপিসমূহ আছে তা জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৮৭)

SHARE

About bnews24

Check Also

২০২৫ সালের জন্য হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে

২০২৫ সালের জন্য হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে এ‌ক সংবাদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *