মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির কপিরাইট কেউ নিতে পারবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালত বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক ছবির স্বত্ব কোনো ব্যক্তির নয়, এর স্বত্ব একমাত্র রাষ্ট্রের।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির ঘটনায় যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন আদালত।
আদালতে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনিক আর হক। সাংবাদিক নাজমুলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
রায়ের পর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের কপিরাইট নিয়ে মামলা হয়েছিল। আদালত বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি, মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ছবি এবং স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ছবিগুলো কীভাবে ব্যবহার হবে- তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো আইন বা বিধান ছিল না। শুধু এই দুটি বই নয়, আরও বিভিন্ন বইয়ে ছবিগুলো ব্যবহার হয়েছে এবং বইয়ের কপিরাইট পাবলিশারদের নামে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি খুবই স্বাভাবিক যে, ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে। এখন আমরা সেই ছবিগুলোর কপিরাইট দাবি করব না, তবে বইয়ের কপিরাইট আমাদেরই থাকবে। এটাই আদালতের পর্যবেক্ষণ।
তিনি আরও বলেন, আজ ঐতিহাসিক যে বিষয়টি হয়েছে, তা হলো বঙ্গবন্ধুর পিকটোরিয়াল এবং ইমেজেস নিয়ে আদেশ। স্বাধীনতার যুদ্ধকালীন ছবি ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ছবি দিয়ে যতগুলো বই প্রকাশ হবে, সেসব ছবির কপিরাইট রাষ্ট্রের থাকবে। এটা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাবি করতে পারবে না। এ ছবিগুলো দিয়ে যখন বই বের হবে, তখন বইয়ের কপিরাইট ব্যক্তির থাকবে। আদালত এও বলে দিয়েছেন, যেহেতু মুজিববর্ষ উপলক্ষে বইগুলো ছাপানো হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে যেন বইয়ের কার্যক্রম মন্ত্রণালয় শেষ করে। এরপর যে বইগুলো প্রকাশ হবে, সেগুলোর মধ্যে যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ থাকে, যেখান থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী অনিক আর হক বলেন, আদালত আজ আদেশ দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবির ওপর কোনো ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের কারো কোনো স্বত্ব থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর ছবির স্বত্ব থাকবে জনগণের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে। কেউ নিজের বলে দাবি করতে পারবে না। যারা বইগুলো এরই মধ্যে পাবলিশ করেছেন, সেগুলো তারা আবার সংগ্রহ করে প্রত্যেকটিতে লিখে দেবেন যে, বইগুলোতে ব্যবহার করা ছবির স্বত্ব প্রকাশকের নয়।
বঙ্গবন্ধুর নামে বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির ঘটনায় সাংবাদিক নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে গত বছরের ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।