রাজধানীর সবচেয়ে বড় নদীবন্দর সদরঘাটে যাত্রী হয়রানি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সদরঘাট ‘ফিটফাটই’ থাকবে।
দ্বিতীয়বার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিপিং রিপোর্টার্স ফোরাম, বাংলাদেশের (এসআরএফবি) নেতাদের শুভেচ্ছা জানাতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকালে সদরঘাটে দখল এবং যাত্রী হয়রানির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সদরঘাটে গিয়ে আমি কিন্তু দোকানপাট সব তুলে দিয়েছিলাম। লাস্ট কিছু দিন ধরে আমার কাছে তথ্য আসছে যে, হয়রানি আবার শুরু হয়ে গেছে, খারাপ পর্যায়ে আছে। আমি বিনা রিপোর্ট যাবো…। এই ধরনের কাজ যারা করেন তারা রাজনৈতিক কনফ্লিক্টের সুবিধা নেয় যেন এদিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। এটার ব্যাপারে আমরা শক্ত পদক্ষেপ নেবো। আমরা যেটা বলছি, সদরঘাট ‘ফিটফাট’ সেটাই থাকবে।
ঢাকার চারপাশের নদী নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একটা পজিটিভ জায়গা আছে। সেটি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে নির্বাচনকালীন আমরা একটা সভা করেছি। ঢাকার চারপাশের নদীর পাড়ের সৌন্দর্যবন্ধন সংক্রান্ত যে, প্রকল্প তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে কমিটি হচ্ছে। ঢাকার চারপাশের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী খুবই সিরিয়াস।
‘প্রধানমন্ত্রী খুব সিরিয়াস, বিশেষ করে দুইটা জায়গায় তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের ঢাকার চারপাশের যে, ব্রিজগুলো লো হাইডেড (নিচু) সেগুলো অপসারণ করা হবে। আর আমাদের গোমতী নদীতে যে আটটি ব্রিজ আছে, সেখানে নেভিগেশন যেন ঠিক থাকে, তার নির্দেশনা সরাসরি আছে। স্থানীয় সরকার হয়তো প্রকল্প নেবে। আমরা তাগাদা দেবো।
খালিদ মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে যে, নতুন প্রকল্প না নিয়ে চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করা। আমাদের কাজগুলো চলমান থাকবে। আমরা নদীর পাড়ে মানুষ নিতে পেরেছি। ঢাকা উদ্যানে এখন লাখ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত হাঁটে, সেখানে আগে কেউ যেতো না। মানুষ এখন ভাবতেছে।
বালু মহাল নিয়ে তিনি বলেন, দেশে ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে বলেই তো বালু দরকার। এই বালু তো বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। সেটা যেন পরিকল্পিত হয় সেটার ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টি আছে। ইট-ভাটাগুলোরও তো দরকার। ইতোমধ্যে সেগুলোকে অটোমেশন করা হচ্ছে। এরা সফল হলে সাধারণ ইটভাটাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
নদী রক্ষায় সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, নদী নিয়ে কী ভাবতেছেন তা নিয়ে সেমিনার করেন। মানুষ জানে না, শুনে না হঠাৎ করে হাতুড়ি-বাটাল নিয়ে ভাঙচুর শুরু করলাম, মানুষ হতভঙ্গ হয়ে যায়। নদী রক্ষা কমিটিকে সব জেলায় কমিটি করার নির্দেশনা দেন প্রতিমন্ত্রী।
আগামী প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল ভোলায়, আমাদের হাতিয়া, এত বড় একটা জায়গা ৫০ বছরে আমরা তাদের একটা যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারলাম না। সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, এগুলোর মানুষ বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। এগুলো নিয়ে আমাদের অনেক আগে ভাবার দরকার ছিল। এখন আমাদের যেহেতু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সন্দ্বীপ ও কুতুবদিয়া যে, প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তাতে যদি জেটিগুলো নির্মাণ হয় তাহলে জোয়ার-ভাটায় কাদার মধ্যে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে পড়তে হবে না। আর হাতিয়ার ব্যাপারে আমরা বিশেষভাবে চিন্তা-ভাবনা করছি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে খালিদ মাহমুদ বলেন, আমরা ঢাকাকেন্দ্রিক হচ্ছি। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশ, আর ঢাকা, দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া, পাটুরিয়ার বাইরে আর আমি যাবো না। বাইরে যদি কোনো ফেরি চালু হয় তাহলে তো আমাকে যেতে হবে। দরকার নেই! এখন আমরা বিল্ডিং তুলি, বিল্ডিংয়ের ভাড়াবাবদ সেখান থেকে বেতন নেবো, এই হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, তা তো হবে না। এটা তো সেবা, সেই সেবাটা আমরা দিতে পারছি না।
সাংবাদিকদের তথ্যপ্রাপ্তির বিষয়ে তিনি বলেন, তথ্যের ব্যাপারে তো আমরা বলেছি। আর এখন তো অতো জটিলতা হয় না। নেগেটিভ কাজ যারা করেন তারা তথ্য দিতে চান না। যারা পজিটিভ কাজ করেন তারা তথ্য দেবেনই। যারা তথ্য দিতে চান না, এই নেগেটিভ লোকদের তালিকা করা দরকার। কেন দেবেন না? একটা কাজ হচ্ছে কী পরিমাণ অগ্রগতি হলো, কত টাকা ছাড় হলো, এটা দিতে তো অসুবিধা নেই।
দ্বিতীয়বার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি যে আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছেন, আমি তার বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গাটা খুব পরিষ্কার রাখতে চাই। তিনি যেন কখনও বিব্রত না হন। এই জায়গাটায় আমি সব সময় সচেষ্ট থাকবো। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা ভালো আছি। আরও ভালো থাকবো। কীভাবে ভালো থাকবো সেটা আমাদের নেতা খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।
সভাপতি কাজী জেবেল ও সাধারণ সম্পাদক আফরিন জাহানসহ নেতারা এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রতিমন্ত্রীকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।