Monday , December 23 2024
Breaking News

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ৭০ শতাংশ ধনীদের

সঞ্চয়পত্রে যে বিনিয়োগ হয় তার ৭০ শতাংশের বেশি ধনীদের। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বড়লোকদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ সঞ্চয়পত্র থেকে খুব একটা সুবিধা পাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপনএ ছাড়া যত দিন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহার থাকবে তত দিন দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নতি হবে না।

গতকাল সোমবার পিআরআই কার্যালয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় পিআরআইয়ের পক্ষে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ও গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক।  ‘ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই কর্মশালায় আরো বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাহিদী সাত্তার ও পরিচালক বজলুল হক খন্দকার। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মূল সুবিধাভোগী একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তাদের কারণেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো সম্ভব হয় না। আমাদের একটি গবেষণায় দেখেছি, ৭০ শতাংশের বেশি সঞ্চয়পত্র কেনেন ধনীরা। যত দিন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের হার থাকবে, তত দিন বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করবে না। ’

এম এ রাজ্জাক বলেন, সরকার যে রাজস্ব আয় করে তার ২০ শতাংশই সুদ পরিশোধের জন্য ব্যয় করতে হয়। সরকারের এই সুদ ব্যয় কমাতে হলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে হবে। উচ্চহারে সুদে দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। সঞ্চয়পত্র দিয়ে বড়লোকদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের বদলে অন্য জায়গায় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।

অনুষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের বাজেটের আকার মূলত জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদনের) ১৩ শতাংশের মতো। অর্থাৎ সরকার ব্যয় করে ১৩ শতাংশের মতো। অথচ পৃথিবীর গরিব দেশগুলোতেও গড়ে জিডিপির ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ ব্যয় করে সরকার। সরকারের ব্যয় বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সরকারের ব্যয় কম হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। এতে বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে বহুদিন ধরেই এই বৈষম্য বাড়ার কথা বলা হচ্ছে। ’ শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের কম। শিক্ষায় কমপক্ষে জিডিপির ৪ শতাংশের সমান ব্যয় হওয়া উচিত। কম ব্যয় করার কারণে শিক্ষার মান কমছে। প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখের মতো জিপিএ ৫ পাচ্ছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে গেলে দেখবেন, তারা বলছে যোগ্য জনবল পাচ্ছে না।

এ সময় তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যে জিডিপির মাত্র দশমিক ৭০ শতাংশ ব্যয় করা হয়। অথচ স্বাস্থ্যে জিডিপির ৫ শতাংশ খরচ করা উচিত। স্বাস্থ্যে সরকার কম খরচ করায় গরিব মানুষ সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার বেশির ভাগ সরকার বহন করে। কিন্তু আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় ব্যক্তিকেই বহন করতে হয়। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবায় যে ব্যয় হয় তার ৭০ শতাংশ ব্যক্তি বহন করে। আর সরকার বহন করে ৩০ শতাংশের মতো। বিশ্বের চিত্র এর সম্পূর্ণ বিপরীত। ’

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকারের খরচ কম। টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্যে যেসব পণ্য বিক্রি করা হয়, সেই কর্মসূচি বাড়ানো গেলে গরিব মানুষগুলো সুবিধা পেত। কিন্তু বরাদ্দ না থাকার কারণে এই কার্যক্রম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

এ সময় সরকারি ব্যয় বাড়ানো এবং রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কিছু উপায় তুলে ধরেন তিনি। এম এ রাজ্জাক বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে হলে একটি যথাযথ করব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কর আদায়ে অটোমেশন করতে হবে। যদি সঠিক পলিসি থাকে, জিডিপির ৬ থেকে ৮ শতাংশ সরাসরি কর আনা সম্ভব। আহসান এইচ মনসুর বলেন, কর-জিডিপির অনুপাত দিনদিন কমছে। আগামী দিনে আরো কমবে।

SHARE

About bnews24

Check Also

১৬৫৫ টন চাল আমদানি ভারত থেকে

শুল্ককর প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পর থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১৭ দিনে ভারত থেকে এক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *