সমবায়ের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে যুগোপযোগী সমবায় ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেশের বিদ্যমান সমবায় আইনকে যুগোপযোগীকরণ এবং সমবায় ব্যাংককে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ওপরও ভাষণে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সমবায় আইনটিকে আরো যুগোপযোগী করতে হবে এবং সমবায় ব্যাংক যেটা রয়েছে সেটা এক সময় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কাজেই এই ব্যাংক আইনটাও সময়োপযোগী করে এবং এটাকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে।’
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪৮তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০১৯ উদযাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) কর্তৃক ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পে গ্রামের দরিদ্র ও বিত্তহীন জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ, উপকরণ সরবরাহ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বর্তমানে ১৭৪টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে।
সেই সঙ্গে পল্লী অবকাঠামো সুবিধা ও দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ)-এর মাধ্যমে সরকার ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে গ্রামে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং গ্রামের রাস্তায় সৌরবিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন নেই সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং দেশের শতকরা ৯৩ জন মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌ পথ, সড়ক পথ এবং রেল পথ চালু করা এবং উন্নত করা এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার ফলে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়ছে এবং মানুষের জীবন-মান উন্নত হচ্ছে।
তাঁর সরকার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড), কুমিল্লা এর গবেষণা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনার জন্য ২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না,’ জাতির পিতার বক্তৃতার এই উদ্বৃতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে সে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। কাজেই এই দেশের মানুষ আর কোনদিন কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, মাথা উঁচু করে চলবে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াবে, সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বর্তমান সরকার সমাজের অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে গারো সম্প্রদায় এবং সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত জনগণের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর শতকরা ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নেই বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের বাজেট ও আমরা ৭ গুণ বৃদ্ধি করেছি এবং ইতোমধ্যেই আমরা সল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন লাভ করেছি।’
এই উত্তোরণকে ধরে রেখে আমাদেরকে আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার নির্দেশনা অনুযায়ী এই এগিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সমবায়কে গুরুত্ব দেবো। যাতে করে একসঙ্গে অধিক সংখ্যক মানুষ উপকার ভোগ করতে পারে।’