‘গরুর মাংস আমদানি করলে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার গরুর মাংস দেশের বাইরে থেকে আমদানির পক্ষে নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ভোক্তা অধিকার সচেতনতাবিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি কোরবানিতে ১ কোটির বেশি পশুর প্রয়োজন হয়। ইতঃপূর্বে ভারত থেকে কোরবানির সময় বিভিন্নভাবে গরু আসলেও এখন আভ্যন্তরীণভাবেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। পণ্যের চাহিদা ও আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। পেঁয়াজ আমদানিতে সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারায় পরবর্তীতে বেশি মূল্যে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এতদিন ডিমে বেশি মুনাফা করেছে। দেশে প্রতিদিন ৪ কোটি ডিমের চাহিদা আছে। মাত্র ৬১ হাজার ডিম আমদানির সাথে সাথে বাজারে ডিমের মূল্য কমে আসে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন পেশায় ও সেক্টরে সিন্ডিকেট থাকলেও জনগণের কোনো সিন্ডিকেট নেই। জনগণের সিন্ডিকেট জেগে উঠলে কোনো সিন্ডিকেটই কার্যকর থাকবে না।’
দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনালে ইডেন মহিলা কলেজকে পরাজিত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ চ্যাম্পিয়ন হয়। রানার আপ হয় ইডেন মহিলা কলেজ। চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে ট্রফি ও সনদপত্রসহ যথাক্রমে ২ লাখ ও ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ডিমের বাজারের কারসাজি আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনায় একটি বড় কালো দাগ হয়ে থাকবে। ডজন প্রতি যে ডিম ১৫ দিন আগেও ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা এখন ১২০ টাকায় নেমে এসেছে। উচ্চ মূল্যের কারণে স্বল্প পরিসরে ভারত থেকে ডিম আমদানি হওয়ায় এবং ভবিষ্যতে আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ডিমের বাজারে আগুন কমতে শুরু করেছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এখন কি মুরগি দিনে দুটি করে ডিম পাড়ে? নাকি এটি ছিল ডিম সিন্ডিকেটের কারসাজি? কারা ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট করে গত কয়েক মাসে হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট কেটে অতিরিক্ত মুনাফা করেছে? তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে কম আয়ের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া বাদ দিয়েছে। তাছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের ঘোমটা পরে বাংলাদেশে মহিষের হিমায়িত মাংস আসছে। যা দামে কম হলেও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফলে গরুর মাংসের চাহিদা কমে যাওয়ায় কম দামে মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাবে দেশের প্রান্তিক ডেইরি ফার্ম, পোল্ট্রি খামারসহ এগ্রোফার্মিংয়ের সঙ্গে জড়িত অনেকেই পুঁজি হারাচ্ছে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কন্ট্রাক্ট ফর্মিংয়ের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে এসব প্রান্তিক খামারিরা। খামারিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক মো. তৌহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১১ আগস্ট জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হয়। ওই প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। গ্র্যান্ড ফাইনালের বিষয় ছিল ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতের ভূমিকাই মুখ্য’।