Monday , December 23 2024
Breaking News

সিঙ্গাপুরে রাজকীয় হালে ‘ক্যাসিনো সাঈদ’!

গ্রেফতার এড়াতে সরকারের চলমান ক্যাসিনো অভিযানের সময় ঢাকা থেকে পালিয়ে সিঙ্গাপুরে চলে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বরখাস্ত হওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ।

আর সেখানে বর্তমানে একরকম রাজকীয় হালে দিনযাপন করছেন তিনি বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সূত্র।

জানা গেছে, বর্তমানে সিঙ্গাপুর থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ-ইমুর মাধ্যমে ঢাকার অবৈধ আয় মনিটর করছেন ‘ক্যাসিনো সাঈদ’।

সাঈদের ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রের বরাতে এক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পলাতক এই যুবলীগ নেতা বর্তমানে সিঙ্গাপুরের ফেরার পার্ক এলাকার অভিজাত ‘সিটি স্কয়ার রেসিডেন্স’-এর একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন।

আর সেই ফ্ল্যাটে বসেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ আর ইমুতে ঢাকায় নিজের আয়-ইনকামের হিসাব রাখছেন। মনিটর করছেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতির। তার গড়া অপরাধ নেটওয়ার্কের কে কোন অবস্থানে রয়েছেন সে খোঁজখবরও রাখছেন।

ছেলের চিকিৎসার জন্য ‘সিটি স্কয়ার রেসিডেন্স’-এ সাঈদ অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে অন্য একটি সূত্র।

ছেলের চিকিৎসার্থে ফেরার পার্কের ২২০ বেডের নবপ্রতিষ্ঠিত অত্যাধুনিক একটি হাসপাতালে কাছাকাছি একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন সাঈদ।

তবে সেই অ্যাপার্টমেন্ট তার কেনা না ভাড়ায় নিয়েছেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি সেই সূত্র।

সাঈদের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, বর্তমানে অনেকটাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন যুবলীগের এই বিতর্কিত নেতা। বিশেষ করে তার গুরু সম্রাট গ্রেফতারের পর দুশ্চিন্তার কালো ছায়া নেমে এসেছে তার চোখমুখে। বেশ বিচলিত হয়ে দিনরাত দেশের রাজনীতির পরিস্থিতির খবর জানতে চাচ্ছেন তিনি।

তার ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গিয়ে প্রথমে আয়েসী জীবন ও জুয়ার আসরে মত্ত থাকলেও বর্তমানে চুপসে গেছেন সাঈদ। বিশেষ করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরে বসে আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার মাধ্যমে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদটি ধরে রাখতে চেয়েছিলেন সাঈদ। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে মানসিকভাবে অনেকটাই বিধ্বস্ত ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ ইসমাইল হোসেন সম্রাটের আলোচিত এই শিষ্য।

একটি সূত্রের দাবি, সাঈদ সিঙ্গাপুরে এলে অরচার্ডে থাকতেন সবসময়। সম্রাটের সিঙ্গাপুরের স্ত্রী সিন্ডন লী একসময় ওই এলাকায় থাকতেন বলে খবর। সেখান থেকেই সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ক্যাসিনোর রঙ্গমঞ্চ মাতাতেন।

সম্রাটের গ্রেফতারের পর ঢাকা থেকে পালিয়ে প্রথমে অরচার্ডে গিয়েই ওঠেন সাঈদ। কিন্তু কিছু দিন ধরে ফেরার পার্ক এলাকায় অভিজাত ‘সিটি স্কয়ার রেসিডেন্স’-এর সেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকছেন তিনি।

‘সিটি স্কয়ার রেসিডেন্স’ এক হাজারের ওপরে ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই এলাকায় ৬-৭ জন বাংলাদেশি থাকেন। চলমান অভিযানের আগে ঢাকায় মোস্তাফা সেন্টার এলাকায় নিয়মিত আড্ডা দিতেন সাঈদ।

সিটি স্কয়ার আবাসিক কন্ডো আর মোস্তাফা সেন্টারের মাঝামাঝিতে হান্ডি নামে একটি ইন্ডিয়ান (ফুড) রেস্টুরেন্টে বসতেন। সম্রাটের গ্রেফতারের দিনেও তাকে হান্ডিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সিটি স্কয়ারের পাশেই একটি রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা জমাতেন সাঈদ। সেখানে তাদের জন্য ৩টি টেবিল রিজার্ভ করা ছিল।

তবে চলমান শুদ্ধি অভিযানের কারণে রেস্তোরাঁর সেই জমজমাট অবস্থা আর নেই। পুরো চিত্রটাই পাল্টে গেছে। বাঙালিদের বদলে এখন সেখানে ভারতীয়দের আনাগোনা বেশি দেখা যাচ্ছে।

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কেউ আর সেই রেস্তোরাঁর পথ মাড়ান না। গত ১৯ অক্টোবর (শনিবার) রাতে সেখানে গিয়ে এমন পরিবেশই লক্ষ্য করা গেছে।

সদ্য বহিষ্কৃত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ- ফকিরাপুল, আরামবাগ এলাকা তথা ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন সাঈদ। চাঁদা না দিলে তার গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে হুমকি-ধমকি ও ব্যবসা পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতেন।

প্রভাব খাটিয়ে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও গোপীবাগ বালুরমাঠে দুটি কোরবানির পশুরহাট বসাতেন। মতিঝিল ও আশপাশের এলাকার ফুটপাথেও চাঁদাবাজি করতেন। এলাকার উন্নয়নকাজ তদারকির নামে চাঁদার জন্য ঠিকাদারকে জিম্মি করে ফেলতেন।

এ নিয়ে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায়ও পিছপা হতেন না তিনি। বোর্ডসভায় উত্তেজনা ছড়ানোর দায়েও অভিযুক্ত সাঈদ।

ঢাকার ক্যাসিনোবাণিজ্যের হোতাদের অন্যতম তিনি। ফকিরাপুলে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবটি চালাতেন তিনি। সাঈদের ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসত। এ ছাড়া আরও চারটি ক্লাবের ক্যাসিনোর ব্যবসা ছিল সাঈদের নিয়ন্ত্রণে।

SHARE

About bnews24

Check Also

উদ্যোক্তা গ্রুপের সহায়তায় যশোর শীতবস্ত্র বিতরণ

উদ্যোক্তা গ্রুপের অর্থায়নে যশোর বসুন্দিয়ায় ১০০০ মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরনের সময়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *