জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, টিকা কূটনীতিতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বের সকল দেশ যখন করোনা টিকা দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ফেলেছে, তখনো আমাদের করোনা টিকার পূর্ণ নিশ্চয়তা মেলেনি। মাস্ক পরে আর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতে এই অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। সময় মতো মানুষকে করোনার টিকা দিতে ব্যার্থ হওয়ায় করোনা পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কখনোই এদেশে লকডাউন সফল হবে না। কারণ, দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই ঘরে খাদ্য নেই, পকেটে পয়সা নেই। তাই খাদ্য সহায়তা না দিলে ক্ষুধার্ত মানুষ ঘরের বাইরে বের হবেই। শুরু থেকেই আমরা লকডাউনের আগে দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে বলেছি। সদিচ্ছার অভাবে সরকার হতদরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দেয়নি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর এর বিভিন্ন থানা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে পল্লীবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর এর সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখেছেন। দেশের কল্যাণে তারা কিছুই করতে পারেনি। তাই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির পতাকাতলে সামিল হোন।
তিনি বলেন, ৯০ সালের পর থেকে দুটি দলের ব্যবহারে মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়েছে। তারা এক বুক আশা নিয়ে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের মানুষ আবারো পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। ১৯৯০ সালের পর প্রতিটি সরকারই জাতীয় পার্টির ওপরে আঘাত করেছে। কিন্তু মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় জাতীয় পার্টি এখনো মানুষের মাঝে টিকে আছে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন গণমানুষের ভালোবাসায় জননন্দিত নেতা। অপবাদ দিয়ে তাকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া যায়নি। প্রতিটি নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার মৃত্যুর পরে চারটি জানাজায় মানুষের যে ঢল নেমেছে তাতে প্রমাণ হয়েছে দেশের মানুষ কতটা ভালোবেসেছেন পল্লীবন্ধুকে। আগামীতে জাতীয় পার্টির উজ্জল ভবিষ্যত রয়েছে। তাই দলকে আরো শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমান সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা মোকাবেলায় দেশে লকডাউন হচ্ছেনা, মানুষের জীবন ও জীবিকাও হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে উদ্ভট কথা বলা হচ্ছে, যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে পরিহাস করছে সরকার। প্রতিটি মানুষের জীবন ও জীবিকার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। দেশের অধিকাংশ গ্রামেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছে, কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু আরো বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যায় পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক বুক পানির মধ্যে গিয়েও মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। পল্লীবন্ধুর আদর্শ প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের পথ দেখায়। সাধারণ মানুষের প্রতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভালোবাসা ছিলো অকৃত্রিম। ১৪ জুলাই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী সফল করতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, উপদেষ্টা- মনিরুল ইসলাম মিলন, আমানত হোসেন আমানত, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব মো. সামসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন সরকার, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, আনোয়ার হোসেন তোতা, আনিস উর রহমান খোকন, প্রচার সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুম, দপ্তর সম্পাদক ২ এম. এ. রাজ্জাক খান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন মিলন, কেন্দ্রীয় সদস্য হাওলাদার মহিদুল ইসলাম, এলাহান উদ্দিন, মো. আলমগীর হোসেন ও ঢাকা মহানগর উত্তর এর সকল থানার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ।
এর আগে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মামুনুর রহিম সুমন আয়োজনে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।