নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে আগুন বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে। এছাড়া মসজদিটি নির্মাণে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। ফলে নির্মাণের সময় গ্যাসের পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া দু’জন গ্রাহক গোপনে মাটির নিচ দিয়ে গ্যাসের রাইজার টেনে নেয়। অবৈধভাবে নেয়া বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কমিটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করে। এ সময় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল ওহাব বলেন, আমাদের এই লাইনগুলো ১৯৯৬ সালে দুর্ঘটনাস্থলের নিচে বসানো ছিল, তারা আমাদের নিয়ম না মেনে আমাদের লাইনের নিচে দিয়ে বেইজমেন্ট করেছে।
এছাড়া ২০০০ সালে নিয়ম না মেনেই মসজিদের স্থাপন করে। মসজিদটি তৈরি করার সময়ই তারা লাইনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
তিনি বলেন, লিকেজ না হওয়া পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায় না। যেহেতু আমাদের গ্যাস লাইন অবৈধভাবে স্থানান্তরিত করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে মসজিদ নির্মাণের সময় পুরাতন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখান থেকে লিকেজ তৈরি হলে গ্যাস লিক হতে থাকে।
কমিটির প্রধান বলেন, মসজিদের ফ্লোরে ৬/৮ সিসি ঢালাই না থাকায় সেই গ্যাস মসজিদের এসি চেম্বারে গিয়ে জমে। সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প লাইন চালু করলে তা স্পার্ক করে এই ঘটনা ঘটে বলে আমরা মনে করছি।
তিনি বলেন, দেওয়ান ও শওকত আলী নামে দুই ব্যক্তি অবৈধভাবে তিতাসের নিয়ম না মেনে গ্যাস লাইন স্থানান্তর করেন। এছাড়া মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন ছিল। আর গ্যাস লিক হচ্ছে সেটা মসজিদ কমিটি বা স্থানীয়রা কাউকে কিছু জানাননি। একইসঙ্গে মসজিদ নির্মাণে রাষ্ট্রীয় অনুমোদন নেয়া দরকার- সেটার কোনো দলিল বা কাগজ তারা (মসজিদ কমিটি) দেখাতে পারেনি।
আবদুল ওহাব বলেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি বলেছেন, গ্যাস লাইন সারানোর জন্য তাদের কাছে কে বা কারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। তিনি তাদের নাম বা এর কোনো প্রমাণও দিতে পারেননি। তিনি কেন বলতে পারছেন না- ওনার কাছে কে টাকা চেয়েছেন? গ্যাস লিক করেছে কমিটি আমাদের জানায়নি।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী মো. আল মামুন বলেন, যেখান থেকে অভিযোগ আসে বা পাচ্ছি সেখানেই আমরা সমাধান করছি। এটা আমাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ের মধ্যে পড়ে। তিতাসের কেউ ঘুষ নিয়ে পার পেয়ে যাবেন- তা হতে পারে না। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ৩১ জন মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে এসি নয়, গ্যাসলাইন থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।