মোঃরেজাউল করিম, বাগমারা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর বুধবার ২০২০ আপডেট: টাইম ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সময় ৪.২২ pm
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় দ্বিতীয় দফায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ৭টি ইউনিয়নের ফসল ও নিম্ন এলাকার বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। অব্যাহত গত ৪ দিনের প্রবল বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
গত এক মাস পর দ্বিতীয় দফায় বন্যায় এলাকার ব্যাপক হারে ক্ষতির পরিমান বেড়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে বাড়ি-ঘর তলিয়ে মানুষ গৃহবন্দী রয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে মাটির ঘর-বাড়ি। পানি থেকে রক্ষার্থে উঁচু বাঁধ-বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। এক দিকে নীচে পানি উপর দিকে বৃষ্টি নামে এতে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতবস্থায় গত ৫ দিনেও সরকারী ভাবে কোন সাহায্য সহযোগীতা বানভাসীদের মিলেনি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, প্রতিনিয়ত বানভাসিদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে এবং রাজশাহী-৪ বাগমারা আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের দেয়া ১৭ মেট্রিক টন চাল বানভাসিদের মধ্যে বিতরণের প্রস্ততি চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণের সাথে উজানের পানি মিলে পানির তোড়ে ফের এলাকায় দেখা দেয় প্রবল বন্যা। এছাড়া দ্বীপপুর ইউনিয়নের জুলাপাড়ার মরাঘাটির নিকটের ভাঙ্গা বেড়ী বাঁধ দিয়ে উপজেলার উত্তর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা আর কয়েক দিনের অতি বৃষ্টিতে নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।
এতে করে উপজেলার কাচারী কোয়ালীপাড়া, ইউনিয়ন, দ্বীপপুর, বাসুপাড়া, ঝিকরাসহ ৭টি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়। অতি বন্যায় রোপা-আমন ও আউশ ধান, পানবরজ, এবং সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার খোর্দ্দঝিনা গ্রামেে আওয়াাামীলীগ নেতা আহম্মদ আলী বলেন, বন্যার পানিতে খোর্দ্দঝিনা গ্রামের নাাছের আলী, ফজলু রহমান, আবুবকর, ইসমাইল হোসেন , সাইফুুল ইসলাম, এমদাদুল হক, খালেক, মতিউর রহমান,ইসমাইল হোসেন, শফিকুল ইসলাম, আনোয়ারা বেওয়া, দেলবর রহমান, আকরাম, কুদ্দস, জানবক্স , জহির উর্দ্দিন, জাহানারা, রেজাউল, খোদাবক্স, রহিদুল ইসলাম এর কাঁচা পাকা ঘরবাড় পানিতে ডুবে গেছে যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে । পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে ঝিকরা ইইউনিয়নের ঝাড়গ্রাম,খোর্দ্দঝিনা,গুনিয়াডাঙ্গা,শিবদেবপাড়া খালিশপাড়া,ভানসিপাড়া, ঝিকরা আজরামপুর চকসেউজবাড়ি, বুধুপাড়া ,রায়নগর ঝিকরা ফৌজদারপাড়া ,রায়সেনপাড়া,রনশিবাড়ি,নারায়নবাড়ি, নামকান, মরুগ্রাম, বারুইপাড়া, ঝিকরা মাধাইমুড়ি, মদাখালী বাজার হইতে ঝিকরা পর্যন্ত। ফৌজদার পাড়া হইতে রনশিবাড়ি বাজার ও রনশিবাড়ি হইতে নারাায়নবাড়ি পর্যন্ত রাস্তাঘাট যোগাযোগ বন্ধ। ঝিকরা সহ- বাগমারার প্রায় এলাকা শতশত পরিবারের মানুষ পানিবন্দির অবস্থা চোখে পড়ে।নারায়নবাড়ি, ঝাাড়গ্রাম,রনশিবাড়ি গ্রামে বর্ষার পানি জমে ১৫/২০ মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে । ঝিকরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগে সাধারণ সম্পাদক মানিক প্রামাণিক ও রনশিবাড়ি গ্রামের ডাঃমোকলেছুর রহমান জানান, অতি বৃষ্টিতে অধিক ক্ষতি গ্রামের মাটির বাড়ি গুলোর মধ্যে ,নারায়নবাড়ি গ্রামের নাছের আলীর পুুত্র নাজিম বড় ভাই নান্টুু ,রনশিবাড়ি গ্রামের রমজান আলীর পুত্র রেজাউল, আঃ সামাদের পুত্র এমদাদুল হক, আবুলের পুত্র আনিছার রহমান সহ- আরো মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে তারা রনশিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেে।
বাগমারা উপজেলা যুুবলীগের সাধারন সম্পাদক আঃ জলিল মাষ্টার বলেন, ঝিকরা ইউনিয়নের নারায়নবাড়ি ও রনশিবাড়ি, নামকান সহ- ঝাড়গ্রামেে মৃত মেহের আলীর ছেলে খাজা ময়েন উর্দ্দিন বড় ভাই আজাহার আলী এছাহাক আলীর পুত্র মোনায়েম,হিজির মেয়ে বিধবা নুরজাহান , মৃত ছইমুউর্দ্দিনর পুত্র আঃ সালাম মোল্লা বাড়ি সহ- ইউনিয়নের আরো অনেকের বাড়ি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি গ্রস্তরা বাড়ি ছেড়ে অনেকে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়ি কিংবা উঁচু কোন স্থানে আশ্রয় নিয়ে অনাহারে অদ্ধাহারে জীবন যাপন করছে ।গত দু’ দিন আগে তার মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। বানভাসিরা বিবি ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বৃষ্টি-বাদলে কষ্টে জীবন যাপন করছেন। একদিকে বৃষ্টি অন্য দিকে বন্যা এতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে পড়েছে। পুকুরের মাছ সব চলে গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, বন্যায় কোন এলাকার মানুষ অভুক্ত নেই। প্রতিনিয়ত বানভাসিদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে এবং স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের দেয়া ১৭ মেট্রিক টন চাল বানভাসিদের মধ্যে বিতরণের প্রস্ততি চলছে। বানভাসিদের মধ্যে মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বানভাসিদের সহযোগীতা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
একই ভাবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, চলতি বন্যায় উপজেলার বড়বিহানালী ও দ্বীপপুর , ঝিকরা ইউনিয়নের বেশী ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বাসুপাড়া, শ্রীপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের ফসল ও বাড়ি ঘরের ক্ষতি হলেও দুরাবস্থা নেই। সরকারী ভাবে বানভাসিদের তালিকা চেয়ারম্যানদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয় গুলো নিয়ে তিনি উচ্চ মহলের সংগে কথা বলেছেন। শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বলেন, এবারের বন্যায় কৃষকদের বেশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৩ শত হেক্টর জমির ধান ও ৭ হেক্টর জমির পান বরজ ক্ষতির একটি তালিকা করা হয়েছে। মঙ্গলবার তিনিসহ জেলা কৃষি উপপরিচালক কৃষিবিদ শামসুল হক এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতির এই সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।