এবার করোনাভাইরাসের ধাক্কা লেগেছে আগামী বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায়ও। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলে নির্ধারিত আছে এই দুটি পরীক্ষা। এর মধ্যে এসএসসির পরীক্ষার্থীরা একটি বছর বাসায় বসেই কাটিয়ে দিয়েছে। এমনকি দশম শ্রেণিতেও তিনটি মাস চলে গেছে। গত আগস্টে ভর্তি করা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার অপেক্ষায় আছে। উভয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই এখন পর্যন্ত সরাসরি পদ্ধতির পাঠদান থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় তাদের সিলেবাসও ছোট করে পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ২০২২ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে তারা এখন দশম শ্রেণিতে। নবম শ্রেণিতে তাদের সরাসরি পাঠদান হয়নি। আর ওই বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও একই পরিস্থিতি। তবে তাদের পরীক্ষার সময়টা একেবারে কাছে নয়। যে কর্মদিবস আছে, সেটাই বিবেচনায় নিয়ে সিলেবাস পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে দেশের শিক্ষাঙ্গনে। আগামী ৩০ মার্চ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা আছে। কিন্তু ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে উর্ধ্বমুখী হয়েছে। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফের বেড়ে যেতে পারে ছুটি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার তারিখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার এবারের এসএসসি-এইচএসসি এবং পিইসি-জেএসসি পরীক্ষার্থীদের শ্রেণিকাজের পরিকল্পনা করেছিল। একইসঙ্গে অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সরাসরি পাঠদানের পরিকল্পনাও চূড়ান্ত ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের কারণে সেই পরিকল্পনা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে পাঠদান আর পরীক্ষাগ্রহণে নতুন পরিকল্পনা নিতে হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই অবস্থায় আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়েও নতুন পরিকল্পনা ও প্রস্তাব তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সিলেবাসের ওপর ২১ সপ্তাহের একটি অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক ওই সিলেবাস অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিতের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সিলেবাসটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.dshe.gov.bd) আছে। ক্লাস চালু হলে যে বিষয়গুলোর ওপর শ্রেণির কাজ হবে সেগুলোর ওপর এই অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মশিউর রহমান।
প্রস্তাবে যা আছে : সূত্র জানায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এনসিটিবি থেকে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ওপর একটি সিলেবাস অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। অনুমোদনের পর এটি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পাঠানো হবে। বোর্ডগুলো তা প্রকাশ করবে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত সিলেবাসটি কর্মদিবস ধরে তৈরি হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার আগে কমপক্ষে ১৫০ কর্মদিবস শ্রেণিকাজ হবে। আর এইচএসসির ক্ষেত্রে ১৮০ কর্মদিবস ক্লাস নেওয়া হবে। যদি ৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়, তাহলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস নেওয়া হবে তাদের। দিন ধরে পরিকল্পনা তৈরি করায় ২০ শতাংশের মতো সিলেবাস কমছে বলে জানা গেছে। এই দুটি পরীক্ষায় প্রায় ৩৩ লাখ পরীক্ষার্থী আছে বলে জানা গেছে।
এ বছরের এসএসসি-এইচএসসি : এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা আগামী জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে নেওয়ার চিন্তা আছে সরকারের। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। সেটি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া এসব শিক্ষার্থী যথাসম্ভব অনলাইন ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।
এরপরও এসব শিক্ষার্থীর সরাসরি পদ্ধতির পাঠদান শুরুর চিন্তা আছে সরকারের। ৩০ মার্চ খোলা সম্ভব হলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ক্লাস নেওয়া হবে। আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে ৮৪ দিন। এসব পরীক্ষার্থীকে সপ্তাহে ৬ দিনই ক্লাসে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এই দুটি পরীক্ষায় প্রায় ৩২ লাখ পরীক্ষার্থী আছে বলে জানা গেছে।
জেএসসি-পিইসি পরীক্ষা এবং অন্যদের ক্লাস : সূত্র নিশ্চিত করেছে, জেএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে সরকারের এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ঘোষিত পরিকল্পনায় মনে হচ্ছে, সরকার এবার এই পরীক্ষাটি নিতে চাচ্ছে না। যে কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মতোই তাদেরকেও (অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী) সপ্তাহে একদিন স্কুল-মাদ্রাসায় আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
তবে পিইসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে অনড় আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যে কারণে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে এবারের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে পিইসি পরীক্ষার্থীদেরও সপ্তাহে ৬ দিন স্কুলে আনার কথা বলা হয়েছে। পরে আলাপকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পিইসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।