বাগমারা (রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ দেশে করোনা মহামারি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে আবার সর্বাত্মক লকডাউন দিচ্ছে সরকার। দ্বিতীয় দফায় লকডাউন দেওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে গোটা দেশ। একইসঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষদেরও বাড়বে দুর্দশা। শনিবার সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার পরই এ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। লকডাউনে তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়বেন বলেও আশঙ্কা। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষেরা করোনার চেয়েও অর্থনৈতিক সংকটকে বড় মনে করছেন।
উপজেলার মদাখালী বাজারে ভ্যান চালান কালাম মোল্লা। তিনি বলেন, ‘করোনার জন্য লকডাউন দিলে এ কয়দিন কি খাব? আমাদের খাবার কে দেবে? সবাই বলে ঘরে থাকলে করোনা হবে না। ঘরে থাকলে করোনা হবে না, কিন্তু ক্ষুধা তো লাগবে। করোনা থেকে বাঁচলেও ক্ষুধায় ঠিকই মরব। আমাদের আগে খাবার দাও তারপর লকডাউন দাও। লকডাউনে বড়লোকরা ভালো থাকে আমরা কষ্টে থাকি। ভ্যান ও রিকশাওয়ালা একদিন গাড়ি নিয়ে বের না হলে বাড়ির সবাইকে না খেয়ে থাকতে হয়। এক-দেড় বছর ধরে ইনকাম কম হচ্ছে। আমাদের মতো গরীবদের এসব খোঁজ তো কেউ রাখে না।’
অটোরিকশা চালক মোফাজ্জল বলেন, ‘বাগমারাতে শিক্ষার্থী বেশি। আমাদের অধিকাংশ যাত্রীই শিক্ষার্থী। একবছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভ্যান ও অটোরিকশা চালকদের আয় কমে গেছে। গত লকডাউনে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। খুবই কষ্ট দিন কাটাতে হয়েছে। নতুন করে আবার লকডাউন দিয়েছে, সামনের দিনগুলোতে কষ্ট বাড়বে।’
খাবারের দোকানদার ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। কোনো রকমে খেয়ে-পড়ে চলছি। গতবছর লকডাউন ছিল, সেই ক্ষতি কিছুটা কাটতে পেরেছি। আবার লকডাউন দিলে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বসবে।’
চা দোকানদার মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউন দিলে তো ক্ষতি। কাস্টমার পাব না, দোকান খোলা রাখতে পারব কি-না ঠিক নেই। এই দোকানটাই আয়ের উৎস, দোকান বন্ধ রাখলে উপার্জন করার মতো কোনো কাজ থাকবে না।’
বাগমারার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ঘুরে পারুটি বিস্কুুট বিক্রি করেন গফুর আলী। তিনি বলেন, ‘১৭ বছর ধরে বাগমারার বিভিন্ন বাজারে কেক বিস্কুুট পারুটি বিক্রি করি। এর আয় দিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ ৫ জনের পরিবার চলে। অন্যকোনো কাজ কখনো করিনি, পারিও না। গরমকাল আসছে, সামনে রোজার মাস, ভেবেছিলাম ব্যবসা ভালো চলবে। লকডাউন দিলে তো পেটের ভাত জুটবে না। সংসার চালানো অনেক কষ্টকর হবে।’