Monday , December 23 2024
Breaking News

পায়রা নদীতে ইলিশ পাচ্ছে না জেলেরা

মনিরুজ্জামান সুমন, আমতলী (বরগুনা)

অবরোধ শেষ হওয়ার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও পায়রা নদীতে রুপালী ইলিশের দেখা নেই। খালি হাতে ফিরছে জেলেরা। ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ তারা। জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এতে দ্রুত সরকারি সহায়তা দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।

ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, অক্টোবর মাসের শেষ ভাগে এবং পুরো নভেম্বর মাসে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ইলিশ কমে যায়। ওই কারণে পায়রা নদীতে ইলিশ কমে যেতে পারে।

জানা গেছে, গত ২৫ অক্টোবর মধ্যরাতে ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। ওইদিন মধ্যরাত থেকেই উপকুলীয় ১৪ হাজার ৬৮৯ জন জেলে নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে পড়ে। জেলেরা আশায় বুক বেঁধেছিল অবরোধ শেষে নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ ধরা পরবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিফে হয়ে গেছে। অবরোধ শেষ হওয়ার তিনদিনেও নদীতে ইলিশের দেখা নেই। জেলেরা নদী থেকে খালি হতে ফিরে আসছে। ইলিশ না পাওয়ায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান জেলেরা।

জেলেরা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। সারা বছর মাছ শিকার করেই চলে তাদের সংসার জীবন। নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা পড়লে ভালো চলে তাদের সংসার। আর মাছ না ধরতে পারলে উনুনে পাতিল উঠে না।

উপকুলীয় অঞ্চলের গভীর সাগরে, সাগরের কিনারে এবং সাগরের শাখা প্রশাখা নদীতে তিন শ্রেণির জেলে মাছ শিকার করেন। ইলিশের ভরা মৌসুম আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস। এ চার মাসে জেলেরা মাছ শিকার করে সারা বছরের হিসেব চুকিয়ে নেয়। ইতোমধ্যে ইলিশ মৌসুম শেষ হয়েছে। দুই-একটি যা ইলিশ পড়ছে তা দিয়ে সংসার চলে না বলে জানান জেলেরা।

এদিকে নদীতে ইলিশ নেই, তার উপর পায়রা নদীর প্রবেশ দ্বার সাগর মোহনায় ডুবোচর। ওই ডুবো চরের কারণে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ইলিশ উল্টো পথে ফিরে যাচ্ছে। ফলে সাগর মোহনা দিয়ে তেমন ইলিশ পায়রা নদীতে প্রবেশ করছে না। এতেও পায়রা নদীতে ইলিশ শিকারী জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পরছে না।

বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলেরা নদীতে জাল ফেললেও তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। দুই একটি যা ধরা পড়ছে, সেগুলো জাটকা।

পায়রা নদীতে ইলিশ শিকারী জেলে ছত্তার,লাল মিয়া, মোস্তফা সিকদার ও জাহিদ মোল্লা বলেন, অবরোধ শেষে জেলেরা আশা করেছিল নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা মিলবে। কিন্তু নদীতে কোনো ইলিশ নেই। খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে। নদীতে ইলিশ না থাকায় জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তারা সরকারিভাবে সহায়তার দাবি জানান।

নয়া বেঙ্গলী গ্রামের জেলে শহীদুল ইসলাম ও জুয়েল মিয়া বলেন, অবরোধ শেষে দুইদিন নদীতে জাল ফেলেছি। মাত্র একটি জাটকা ইলিশ পেয়েছি। ইলিশ না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে আছি।

আড়ৎ মালিক মো. জলিল ফরাজী বলেন, অবরোধে ইলিশ গভীর সাগরে চলে গেছে। তাই পায়রা নদীতে তেমন ইলিশ নেই। দুই একজন জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও তা দিয়ে তাদের সংসার চলে না।

তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় পায়রা নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে না। কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও তা অধিকাংশই জাটকা।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, অক্টোবর মাসের শেষ ভাগে এবং পুরো নভেম্বর মাসে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় নদীতে ইলিশ কমে যায়। এছাড়া নব্যতা সংঙ্কটসহ নানাবিধ কারণে ইলিশ কমে যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ইলিশ দলবদ্ধভাবে চলাচলা করে। অবরোধের কারণে সাগর ও নদীতে ইলিশ অবাধ বিচরণ করেছে। পায়রা নদীতে ইলিশ ধরা না পড়লেও কোথাও না কোথাও ইলিশ ধরা পড়ছে।

SHARE

About bnews24

Check Also

উদ্যোক্তা গ্রুপের সহায়তায় যশোর শীতবস্ত্র বিতরণ

উদ্যোক্তা গ্রুপের অর্থায়নে যশোর বসুন্দিয়ায় ১০০০ মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরনের সময়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *