আওয়ামী লীগ জনগণের দল, যা বলে তা করে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তাদের ‘ভাসমান’ আখ্যায়িত করে সরকার প্রধান বলেছেন, তারা ধাক্কা দিল আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল এত সহজ নয়।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের নিজেদের দলে গণতন্ত্র নেই, তারা গণতন্ত্র চর্চা করবে কীভাবে। খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ ডিসেম্বর নিয়ে। ডাকঢোল পিটিয়ে ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে। এখন নাকি ১১ তারিখ (জানুয়ারি) থেকে আন্দোলন করবে। তাদের সাথে আবার অতি বাম এবং অতি ডান যুক্ত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের উদ্দেশে বলে দিতে চাই, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। জনগণের কল্যাণে কাজ করে। ধাক্কা দিল আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল এতে সহজ নয়।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন, ‘২০০৮ সালে নির্বাচন নিয়ে কেউ কিন্তু প্রশ্ন উঠাতে পারেনি। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করবেন, সেই নির্বাচনে কতটা সিট পেয়েছিল? ২৯টা, পরে আরেকটা উপনির্বাচনে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করে বলেই আজ জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে দেশের উন্নয়নের এই অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে। দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের আগেও ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল জিয়া-এরশাদ, খালেদারা। তারা কেন পারেনি দেশকে উন্নত করতে। তারা আজ গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের জন্ম হয়েছে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে। এরা তো ভাসমান। তাদের বাংলাদেশের প্রতি কেন দরদ থাকবে। হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে তারা আনন্দ পায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল, সেটা ২০০১ সালে। এর আগেও হয়নি, পরেও হয়নি। খালেদার অধীনে দুটি নির্বাচনই বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে, একটা ১৯৯৬ সালে আরেকটি ২০০৭ সালে।’
‘যুদ্ধের পর একমাত্র বাংলাদেশ থেকেই মিত্রশক্তি চলে গিয়েছিল’
জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্বের নানা দিক তুলে ধরে তাঁর কন্যা বলেন, ‘যুদ্ধের পর বিশ্বের প্রতিটি দেশেই মিত্রশক্তির হয়ে যায়। একমাত্র বাংলাদেশেই যুদ্ধের পর ভারতীয় মিত্রশক্তি দেশ ছেড়ে যায়। যা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসিকতার জন্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যে সমস্ত দেশ বিপ্লব করেছে, যুদ্ধ করেছে, তাদের মিত্রশক্তি তাদের সহযোগিতা করেছে, কোনো দেশ থেকেই মিত্রশক্তি কিন্তু ফেরত যায়নি। এখনও বহুদেশে তাদের মিত্রশক্তি রয়ে গেছে। বাংলাদেশে একটা ব্যতিক্রম। ভারতীয় সৈন্যরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা রক্ত দিয়েই আমাদের বিজয় এনে দিয়েছিল। তারপরেও স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা যখন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে যখন বললেন- আপনার সেনাবাহিনী আপনি কবে ফেরত নেবেন। তিনি বলেছিলেন, আপনি যখনই বলবেন তখনই এবং এক বছরের মধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত গিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশ কিন্তু এই সাহস পায়নি। এই স্বাধীনচেতা ও সাহস যেটা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাঝে ছিল।’
গ্রামের মানুষের কাছে তাদের অর্থনৈতিক অধিকারসহ সবধরনের অধিকার পৌঁছে দেওয়াই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য বলে জানান তাঁর কন্যা।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটা বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলা! তার ভরসা ছিল একমাত্র দেশের মানুষ৷ স্বাধীনতার পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, আপনার তো কিছু নেই, কোনো কিছুই নেই এদেশে। কীভাবে করবেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, সেই মাটি মানুষ দিয়েই আমি আমার দেশ গড়ে তুলব। এবং সেটাই তিনি প্রমাণ করেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু তাই না, তিনি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপযোগী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন নিজের হাতে। আমরা যেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাই এটাই এটাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তারা স্পষ্ট বক্তব্য- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গেই বৈরিতা নয়। এটাই তিনি বলতেন এবং এটাই তিনি মেনে চলতেন। পাশাপাশি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আর কয়েকটি বছর যদি তিনি হাতে সময় পেতেন বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারত।’ তিনি বলেন, ‘উন্নত-সমৃদ্ধ হিসেবে তিনি দেশ গড়ে তুলতে পারতেন। সেই সক্ষমতা, সাহস, কর্মদক্ষতা এবং পরিকল্পনা তার ছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। যারা আমাদের দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা যুদ্ধের সময় বেঈমানি করেছে, হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রাজাকার বাহিনী বানিয়ে, আলবদর বানিয়ে, আমাদের মা-বোনদেরকে হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছে, গ্রামে গ্রামের পর গ্রাম পথ চিনিয়ে নিয়ে গেছে। যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠুক সেটাই তারা চাইনি, তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে থাকেনি। এবং সেই সাথে সাথে তাদের দোসর যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, ওই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করেছিল, তারা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিলো। যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেইসময় তারা আঘাত হানল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল।’