Monday , December 23 2024
Breaking News

দুর্নীতির লাগাম টানতে হার্ডলাইনে দুদক

দুর্নীতির লাগাম টানতে হার্ডলাইনে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির মূলোৎপাটনের ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছে তারা। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। চলছে বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে শুদ্ধি অভিযানের প্রস্তুতি।

এদিকে ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি একসাথে ৪০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়েছে দুদক। গণপূর্ত অধিদফতরের ছয় নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১১ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি ও বালিশকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৩৩ জনকেও তলব করেছে দুদক। গত বুধবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বরাবর অনুসন্ধান দলের প্রধান ও সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। এর আগে সংসদ সদস্যসহ ২২ ভিআইপির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। দুদকের চিঠিতে বলা হয়, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অনুসন্ধান কিংবা মামলা চলমান রয়েছে। এই শুদ্ধি অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন মন্ত্রী-এমপি ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অভিযুক্ত মন্ত্রী ও এমপির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এর পরপরই ৩০ সেপ্টেম্বর দুদক অবৈধ সম্পদের অধিকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে। সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন। টিমের অপর সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। জানা গেছে, সরকারের দুর্নীতিবিরোধী কাজের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে, এমন চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে দুদক। গত বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপককে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দুদক সূত্র জানায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দিন দিন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বিস্তৃত করা হচ্ছে। প্রথমে যাদের নাম ছিল পরে আরো বড় ভিআইপিদের এ তালিকায় আনা হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সন্দেহভাজনদের তালিকা অনুযায়ী তথ্য দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নির্ভুল তথ্য দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যস্ততা আরো বেড়ে গেছে।

বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা হওয়া প্রথম ২২ জনের মধ্যে রয়েছেন: চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক পাড়ার রহস্য পুরুষ প্রশান্ত কুমার হালদার, গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভ‚ইয়া, মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভ‚ইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং তার সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানের (মিজান) বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এ ছাড়া গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক রূপণ ভ‚ইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগ বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভ‚ইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। এ ছাড়া এনামুল হকের সহযোগী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), রাজধানীর কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন ও সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এদিকে নতুন করে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা হওয়া ১১ জনের মধ্যে যারা রয়েছেন। তারা হলেন, গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, মোহাম্মদ ফজলুল হক, আব্দুল কাদের চৌধুরী, মো. আফসার উদ্দিন, মো. ইলিয়াস আহমেদ, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মোমেন চৌধুরী, মো. রোকন উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী মুমিতুর রহমান এবং কর্মকর্তা সাজ্জাদুল ইসলাম।

বালিশকাণ্ড: ৩৩ প্রকৌশলীকে দুদকে তলব: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রকল্প পরিচালকসহ ৩৩ প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। রোববার অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমিশনের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন এই নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। আগামী ৬, ৭, ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর দুদক প্রধান কার্যালয়ে তাদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর পাঠানো দুটি চিঠিতে যাদের তলব করা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. হাসিনুর রহমানসহ প্রকল্পটির চার কর্মকর্তা রয়েছেন। ৬ নভেম্বর যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন- গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, তাহাজ্জুদ হোসেন ও মো. মোস্তফা কামাল, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামারুজ্জামান, মো. আবু সাঈদ ও মো. ফজলে হক। ৭ নভেম্বর তলব করা হয়েছে রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী একেএম জিল্লুর রহমান, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম, সুমন কুমার নন্দী, মো. শাহীন উদ্দিন ও মো. জাহিদুল করিমকে।

১১ নভেম্বর যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন- রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নজিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান, পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম, মো. রওশন আলী, রাজশাহী সার্কেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আহসানুল হক ও খোরশেদা ইয়াছরিবা। ১২ নভেম্বর যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন, শাহনাজ আক্তার, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিউজ্জামান ও মো. রওশন আলী এবং রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মকলেছুর রহমান। ১৩ নভেম্বর তলব করা হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শৌকত আকবর, উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. হাসিনুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুব রহমান, মো. মেহেদী হাসান এবং পাবনা গণপূর্ত বিভাগের মো. রফিকুজ্জামান। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বালিশকাণ্ডসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় ১৭ অক্টোবর দুদক নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে। এই অনুসন্ধান দলের অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান ও উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযাগ্য সূত্র জানায়, বিগত মন্ত্রিসভার চারজন মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের দুই শীর্ষ নেতা, একটি সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ও ঢাকার চারজন এমপি ক্যাসিনো তালিকায় রয়েছেন। এ ছাড়া দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের কারণে বর্তমান ২৫ জন এমপি ও সাবেক ১২ জন এমপি প্রধানমন্ত্রীর কালো তালিকায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম এমপি ও সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং ভোলার এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে আরো ২০ জনের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুসহ তার পরিবারের সদস্যদের। আরো কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এ তালিকায় রয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক এক যুবলীগ নেতা ও মন্ত্রী, ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচিত দুবারের এক এমপি, ঠাকুরগাঁও থেকে একাধিকবার নির্বাচিত এক এমপি, আবাসন ব্যবসায়ী রাজশাহীর এক এমপি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি, ঢাকার একাধিক এমপি, নরসিংদীর গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এক এমপি, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের কয়েকজন এমপি, কক্সবাজারের এক সাবেক এমপি কালো তালিকায় রয়েছেন। জামালপুরের এক এমপি যিনি বিগত সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তার বিষয়েও সরকার প্রধানের দৃষ্টি রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র এক নেতা জানান, দুর্নীতিবাজদের তালিকায় নিজেদের নাম রয়েছে কিনা সেটি জানতে দলটির এমপি-মন্ত্রীরা কেন্দ্রী নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তবে তালিকায় কাদের নাম রয়েছে সেটি বলতে পারছেন না নেতারা। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না দুর্নীতির সাথে জড়িত মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের। বেশিরভাগ নেতা, মন্ত্রী ও এমপি অভিযানের পক্ষে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন। আপাতত চুপচাপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সবার একটাই প্রশ্ন তালিকায় সিটিং এমপিদের মধ্যে কারা রয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক এমপি, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বিষয়েও জানতে চান সবাই।

SHARE

About bnews24

Check Also

উদ্যোক্তা গ্রুপের সহায়তায় যশোর শীতবস্ত্র বিতরণ

উদ্যোক্তা গ্রুপের অর্থায়নে যশোর বসুন্দিয়ায় ১০০০ মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরনের সময়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *