বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতা করছে না রাশিয়া। তবে তারা (পশ্চিমা দেশ) কী করেছে, আর কী করতে পারে, তা মস্কো তুলে ধরেছে।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ঢাকার রাশিয়া দূতাবাসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি এসব কথা বলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে মাইন অপারেশনে সহায়তা করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নৌবাহিনী। মাইনমুক্ত করার কাজে সহায়তাকারী সেই নৌবাহিনীর সাবেক দুই সদস্য ভিটালি গুবেনকো ও আলেক্সান্ডার জালুটস্কি বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বিষয়ে মস্কোর মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘আরব বসন্ত’ ঘটাতে চায়। এ বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে জবাবে তিনি বলেন, দশ বছর আগে ইউক্রেনে কী হয়েছিল মস্কোতে মুখপাত্র সেই তুলনা ঢাকার সঙ্গে করেছেন। তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বারা কী ঘটানো সম্ভব। আমরা এখানে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমাদেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি না। আমরা শুধু বলছি দেখতে, পশ্চিমাদেশগুলোর দ্বারা কী ঘটানো হয়েছিল এবং এখানে কী ঘটছে।
এ সময় তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সোভিয়েত নৌবাহিনীর সদস্যদের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে মাইন অপসারণে সহায়তার কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে অচল সমুদ্র বন্দর চালু করার জন্য জাতিসংঘের সহায়তার আবেদন করে বাংলাদেশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে বন্দর চালু করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেটি তখন জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম বন্দর সচল করার জন্য মস্কোকে অনুরোধ করেন। মস্কো দ্রুতই রাজি হয় এবং ওই মাসেই এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওই কাজের জন্য এক কোটি ডলার চেয়েছিল। তবে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে সোভিয়েত নেভি ওই কাজ করেছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে রাশিয়া সহযোগিতা করতে পেরেছে বলে আমরা খুশি ও গর্বিত। আজকের প্রগতিশীল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আমরা নির্ভরযোগ্য অংশীদার হতে পেরেও আনন্দিত।
এ সময় ভিটালি গুবেনকো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে মাইন অপসারণের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাইন অপসারণের জন্য ১৯৭২ সালে আমি চট্টগ্রাম আসি। তখন কাজটি খুব কঠিন ছিল। দুই বছর অক্লান্ত চেষ্টার মাইন অপসারণ করা হয়। পরে বন্দর দিয়ে জাহাজ চলাচলও শুরু হয়। তখন স্থানীয় জনগণ খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন। তাদের কথা আমার স্মরণে আছে।
তিনি আরও বলেন, ৫০ আগে এদেশের অবকাঠামোর এত উন্নয়ন হয়নি। এখন বাংলাদেশে ৫০ বছর পর এসে দেখি অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এ উন্নয়ন দেখে খুব ভালো লাগছে।