বিদেশ সফরে গেলে বিমানে বসে বাংলা ছবি দেখেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশ পরিচালনার কাজে ব্যস্ত থাকায় দেশে সিনেমা দেখার ফুরসত না মিললেও বিদেশ সফরে যাওয়ার সময় যেটুকু সময় পান সেখান থেকে বাংলা সিনেমার জন্য সময় রাখেন তিনি।
রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৮-১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমনটাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা ছবির গল্প খুব সুন্দর বলে প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদিন নথি দেখে আর দাফরিক কাজের জন্য আমি তেমন একটা সময় পাই না। তবে যখন বিদেশে যাই তখন বিমানে বসে আমি বাংলা ছবি দেখি। আমাদের দেশের ছবির গল্প এত সুন্দর, আমি অবাক হই।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন ,চলচ্চিত্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম। এর মাধ্যমে সবচেয়ে দ্রুত মানুষের মাঝে বার্তা পৌঁছানো যায়। তাই এমনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে যেন নতুন প্রজন্ম সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে।
জীবনধর্মী, সুন্দর সমাজ ও দেশ গঠনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী ছিলেন। সে সময় পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেছিলেন, পাকিস্তান যদি ভালো এবং শক্তিশালী চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? এজন্য বঙ্গবন্ধু এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন।
উল্লেখ্য, আজ ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭ ও ২০১৮’ অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রশিল্পে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজয়ী শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের কাহিনী আসলেই চমৎকার। অন্য জায়গার টেলিভিশন নাটকে যেমন শাড়ি-গয়নার কমপিটিশন, কিংবা সংসারের খুনসুঁটিপনা দেখি সে তুলনায় আমাদের নাটকগুলো অসাধারণ। এছাড়া আমাদের চলচ্চিত্রে রয়েছে জীবনধর্মী সব কাহিনী। তাই আমি বলব আমাদের চলচ্চিত্রই সব থেকে শ্রেষ্ঠ।
প্রথমেই এটিএম শামসুজ্জামানকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেয়ার মাধ্যমে শুরু হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি।
স্বশরীরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পুরস্কারটি গ্রহণ করে তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন এটিএম শামসুজ্জামান।
তার পরেই রূপবান খ্যাত নায়িকা সুজাতা ও বাংলার রঙিন নবাব খ্যাত অভিনেতা প্রবীর মিত্রের হাতে আজীবন সম্মানা স্মারক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এই তিন গুণী শিল্পীকে পুরস্কৃত করার পরই ধারাবাহিকভাবে অন্য বিজয়ীরা একে একে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেন।
গত ৫ নভেম্বর ২০১৭ ও ২০১৮ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ২৭ ও ২৮ ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী, এটিএম শামসুজ্জামান, সুজাতা ও প্রবীর মিত্র ছাড়াও আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন চিত্রনায়ক ও প্রযোজক এমএ আলমগীর।
এ ছাড়া ২০১৭ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘বিশ্ব আঙিনায় অমর একুশে’ ।
এ ছাড়া ‘গহীন বালুচর’ ছবি দিয়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক পুরস্কার পেয়েছেন বদরুল আনাম সৌদ। ঢাকাই ছবি ‘সত্তা’র জন্য শাকিব খান ও ‘ঢাকা অ্যাটাক’র জন্য যৌথভাবে সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন আরিফিন শুভ। ‘হালদা’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে পুরস্কার পেয়েছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা।
২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘পুত্র’, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ফরিদুর রেজা সাগরের ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’, শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘গল্প সংপে’ (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক ‘জান্নাত’ সিনেমার জন্য মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, যৌথভাবে ‘পুত্র’ সিনেমার জন্য ফেরদৌস আহমেদ ও ‘জান্নাত’ সিনেমার জন্য সাইমন সাদিক পেয়েছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার এবং ‘দেবী’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭ ও ২০১৮’ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মোহাম্মদ মুরাদ হাসান ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।