আগের মতো আবারও মিয়ানমারের সমস্যা সমাধানে পাশে থাকার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে চীন। দেশটির বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি যখন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি হতে দেশ ছাড়েন তার আগে মিয়ানমার সফরে আসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি দু’দিনের সফরে এসে সাক্ষাত করেছেন প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির সঙ্গে। এ নিয়ে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সাংবাদিক লরা ঝোউ তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, পশ্চিমা দুনিয়া থেকে ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে এশিয়ান এই দুই প্রতিবেশী মিয়ানমার ও চীনের ওপর। এ সময়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আরো বেশি কৌশলগত সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াং ই।
তিনি প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের সঙ্গে রাজধানী ন্যাপিডতে সাক্ষাত করেন। বলেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারকে তার নিজস্ব সমস্যা সমাধানে সমর্থন দেবে বেইজিং।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে শনিবার ওই সাক্ষাত হয়। এর পর ওয়াং ই বলেছেন, নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বিষয়ে উন্নয়নের পথে মিয়ানমারকে সমর্থন করবে চীন। বৈধ অধিকার, জাতীয় মর্যাদা, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় সার্বিক বিষয়ে মিয়ানমারের পাশে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অবিচল সমর্থন থাকবে চীনের। এ সময় নিজেদের একদন মৌলিক স্বার্থের প্রতি মিয়ানমারের অকৃত্রিম সমর্থনের প্রশংসা করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃসংশ নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর ফলে মিয়ানমারের ওপর পাহাড়সম চাপ আসতে থাকে। জাতিসংঘ ওই ঘটনাকে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এ কারণে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং এবং এই নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে অবরোধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর বিষয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টান্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গাম্বিয়া। সেই মামলার শুনানি আজ আর কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হচ্ছে হেগে অবস্থিত আইসিজেতে। সেখানে আজকের প্রথম দিনের শুনানিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ নিতে আগেই নেদারল্যান্ডসে পৌঁছেছেন অং সান সুচি।
ওদিকে সিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে আটকে রাখার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে চীনের ওপর চাপ ও সমালোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ ঘটনাকে চীন নিয়মিত বলে আসছে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে। এমন হস্তক্ষেপ না করতে সতর্ক করা হয়েছে। ওদিকে শনিবারেই অং সান সুচির সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোরের অধীনে অবকাঠামো বিষয়ক প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তারা কেউই মাইটসোনে ড্যামের বিষয় উল্লেখ করেন নি। এটি হলো চীনের অর্থায়নে একটি পানিবিদ্যুত বিষয়ক প্রকল্প। স্থানীয়দের বিরোধিতার কারণে ২০১৭ সাল থেকে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সুচি বলেছেন, তার দেশ নিজের সমস্যা সমাধানে পূর্ণ সক্ষম।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট আরো লিখেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে বেইজিং তখনই মিয়ানমার সফর করেছেন ওয়াং ই। জুলাই মাসে উভয় পক্ষ সীমান্ত এলাকা থেকে মান্দালয় শহর পর্যন্ত একটি রেললাইন স্থাপনের উপযুক্ততা যাচাই সম্পন্ন করেছে। গত মাসে দ্য ইরাবতী রিপোর্ট করেছে যে, এশিয়ান সম্পর্ক বিষয়ক চীনের বিশেষ দূত সান গুয়াওসিয়াং সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করেছেন। এ সময় তিনি মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সঙ্গে সরকারের নেতৃত্বে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ১০ লাখ ডলার দিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। সিয়ামেন ইউনিভার্সিটির রিসার্চ স্কুল অব সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের প্রফেসর ফান হংউই বলেন, আগামী বছর মিয়ানমার সফরে যেতে পারে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার সেই সম্ভাব্য সফরের পথ করে দিতে পারে ওয়াং ই’র মিয়ানমার সফর। আগামী বছরে এই দুটি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন শি জিনপিং। তারপর তিনি মিয়ানমার সফরে আসেন নি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে মিয়ানমার সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং।
ফান হংউই বলেছেন, মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের স্থিতিশীলতা বিষয়ে চীন খুব বেশি আগ্রহী হবে। স্থিতিশীল রাখাইন রাজ্য বাংলাদেশে, চীন, ভারত এবং চয়ানা-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।