চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী এমভি বিউটি অব ইমা-২ নামের লঞ্চের তলদেশে ছিদ্র হয়ে পানি ঢোকার ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনা এড়াতে সাড়েঙ কোনোমতে লঞ্চটি নদীর পাড়ে নিতে সক্ষম হয় ও যাত্রীদের নামিয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার লঞ্চটি বিকাল ৪ টার দিকে মুন্সীগঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছলে এ ঘটনা ঘটে।
লঞ্চের ভুক্তোভোগী যাত্রীরা জানান, দুপুর দেড়টায় লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশে চাঁদপুর ছেড়ে এসেছিল। বিকেল ৪ টার দিকে মুন্সীগঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছলে লঞ্চের তলদেশ ফুটো হয়ে যায়। ফুটো দিয়ে দ্রুত গতিতে পানি ঢুকতে থাকতে। এমন খবরে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা জানান, লঞ্চটি কোনো মতে মুন্সীগঞ্জ ঘাটের কাছে ভেড়াতে সক্ষম হন সারেঙ। এরই মধ্যে লঞ্চটি একদিকে কাত হয়ে যায়। যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ঘাটে নামতে সক্ষম হয়। যাত্রীদের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে লঞ্চের সব স্টাফ পালিয়ে যায়।
ভুক্তোভোগী এক যাত্রী বলেন, ‘বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে কয়েকশত মানুষ। আমাদের বিপদে ফেলেই লঞ্চের সব স্টাফ পালিয়ে যায়। পরে অনেক বিড়ম্বনা ও কষ্ট ভোগ করে ঢাকায় পৌঁছাতে পেরেছি। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।’
এমভি বিউটি অব ইমা-২ লঞ্চটি সোনার তরী নামে পরিচালিত এবং ফিটনেসহীন মেয়াদোত্তীর্ণ বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইমা-২ এর মতো ঢাকা- চাঁদপুর রুটে একাধিক মেয়াদোত্তীর্ণ লঞ্চ চলছে। এসব লঞ্চের নেই কোনো ফিটনেস। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী উঠিয়ে বিপদে ফেলা হয় তাদের।
এমন একটি লঞ্চের নাম -মেঘনা রানী। ফিটনেসহীন লঞ্চটি যাত্রী পরিবহনে সম্পূর্ণ অক্ষম হলেও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ঢাকা- চাঁদপুর রুটে প্রতিদিনই চলাচল করছে।
ঢাকা থেকে সকাল ৮ টায় ছেড়ে যাওয়া এই লঞ্চটিতে মাথা সোজা করে হাঁটারও উপায় নেই।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মিজান মালিক এই লঞ্চটির যাত্রী হয়েছিলেন। সেদিন তৃতীয় তলায় সরু সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় তিনি মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। তার মাথায় আঘাতের ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তিনি বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি।
আহত সাংবাদিক মিজান মালিক বলেন, ‘লঞ্চের উপরে উঠানামার সিঁড়ি এতোই সরু যে একজনের বেশি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারে না। তাও মাথা নিচু করে উঠতে হয়। যে কোনো মুহূর্তে শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। ওই দুর্ঘটনায় আমার মাথায় কাটা অংশের চুল কেটে কসমেটিক সেলাই করতে হয়েছে। টানা সাতদিন কড়া এন্টিবায়োটিক খেতে হয়েছে।’
ইমা-২ ও মেঘনা রানী দুটি লঞ্চসহ চলাচল অনুপযোগী লঞ্চে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে চাঁদপুর নৌবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানলাম। তথ্য ও খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’